ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ে আম গাছগুলোতে এবার ব্যপক পরিমান মুকুল দেখা দিয়েছে।বাগান জুড়ে এখন মৌ মৌ গন্ধ। এই সুঘ্রাণে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। মুকুল থেকে আমের গুটি আসা শুরু না করলেও বাগান পরিচর্যায় এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবারও আমের ভালো ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
আরও পড়ুন: মুন্সীগঞ্জে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণ
ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচ উপজেলায় মোট ৪ হাজার ২০১টি আমের বাগান রয়েছে। যার আয়তন প্রায় ৩ হাজার ২২১ হেক্টর জমি। এছাড়া বসতবাড়িসহ মোট ৩ হাজার ৬৬ হেক্টর জমির আম গাছ রয়েছে। পীরগন্জ ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন বাগানে আম্রপালি, সূর্যপূরী, বান্দিগড়সহ কার্টিমন,বারি-৪,ব্যানানা আম ,সূর্যডিম ও গৌরমতি ইত্যাদি বিভিন্ন জাতের আম গাছ রয়েছে। এসব বাগানের প্রতিটি গাছেই ব্যাপক মুকুল এসেছে। কোনো কোনো গাছে গুটিও আসতে শুরু করেছে। ভালো ফল পেতে গাছের পরিচর্যা ও পোকা দমনে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষি ও বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা।
আরও পড়ুন: ব্যবসায়ীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া, মিলনপুর গ্রামের বাগান মালিক আব্দুল্লাহ হক বলেন, শুধু ধান ও গম চাষ করে তেমন লাভ নেই। প্রায় দুই একরের বেশি জমিতে বারি-৪ জাতের আমগাছের বাগান করেছি। এ বাগানে কম বেশি ছয়শ’র বেশি আমগাছ রয়েছে। এ বারি-৪ জাতের আমগাছ একটানা ২০ থেকে ৩০ বছর ফল দিয়ে থাকে। এ বাগান করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় চার-থেকে পাঁচ লাখ টাকার মতো। এই জাতের আমগাছ থেকে গাছ লাগানোর পর দুই বছরের মধ্যে আম ধরে। গত কয়েক বছর আমার বাগানে আম ধরছে। গতবারের চেয়ে এবার বাগানে বেশি মুকুল এসেছে। এ জাতের দুই-তিনটা আমের ওজন এক কেজি হয়। আম পাকে আশ্বিন মাসের শেষ দিকে। তখন এই আম প্রতি কেজিতে বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকা। বিগত বছরে বাগানে আলু ও শাক, হলুদ, আদা সবজি আবাদ করছি। গত বছর সময়মতো কীটনাশক ছিটিয়ে ও পরিচর্যা করে ভালো ফলন ও দাম পেয়েছি। এবারও তাই করব।
আরও পড়ুন: কনস্টেবলসহ ২ জনের মরদেহ উদ্ধার
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার ভাবনাঞ্জ এলাকার আমবাগান মালিক মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, আমার বাগানে ৩০০টির বেশি আমগাছ রয়েছে। আমার বাগানের বেশির আম গাছ সূর্যপুরি ও আম্রপালি। আমগাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। ধান ও অন্যান্য ফসল থেকে আম ও লিচুর বাগান করে লাভ বেশি। এতে পরিশ্রমও কম হয়। বাগানে আম একটু বড় হলে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেই। গত বছর আমি এ বাগান থেকে পাঁচ লাখ টাকার মতো লাভ করছি। তাছাড়া সূর্যপুরি ও আম্রপালি আম-লিচু একটি জনপ্রিয় ও রসালো ফল। দেশে-বিদেশে আমের খুবই চাহিদা রয়েছে। এতে আমার টেনশন কম থাকে। তাছাড়া আমবাগানের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে শাকসবজিও আবাদ করা যায়।
আরও পড়ুন: চাষাঢ়ায় ভুল চিকিৎসায় কিশোরীর মৃত্যু
ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন জাতের আম যেমন বারি-৪, আম্রপালি, সূর্যপুরী, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আসিনিয়া, মোহনা, ফজলি, মিশ্রিভোগসহ দেশি জাতের বিভিন্ন আমের মুকুলে ভরপুর বাগানগুলো। প্রতি মৌসুমে জেলায় আম বিক্রি করে লাভবান হয় অনেক চাষি ও আম ব্যবসায়ীরা।
ঠাকুরগাঁও জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চাষি ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সাবেক ছাত্র সাইফুর রহমান বাদশা বলেন, আমার বাগানে কম বেশি তিনশর বেশি গাছ রয়েছে। অধিকাংশ গাছ আম্র্রপালি, সূর্যপুরী, ল্যাংড়া জাতের। আমগাছে এবার ভালো মুকুল এসেছে। গত বছর সময়মতো কীটনাশক ছিটিয়ে ও পরিচর্যা করে অনেক টাকা আয় করা সম্ভব হয়েছে। তিনি জানান, প্রতি বছরই তার বাগান থেকে সারাদেশে আম সরবরাহ করেন। তার মতো অনেক বেকার যুবক এখন বাণিজ্যিকভাবে আম্রপালি আমের বাগানের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এসব বাগানে গাছ লাগানোর ২-৩ বছরের মধ্যেই আম পাওয়া যায়। লাগাতার ফল দেয় ১০-১২ বছর। ফলনও হয় ব্যাপক।
আরও পড়ুন: পিকআপের ধাক্কায় নিহত ২
ঠাকুরগাঁওয়ের অনেক বাগান মালিক বলেন, বিগত বছরের চেয়ে এবার আমের মুকুল ভালো এসেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে আমের সর্বোচ্চ ফলন হবে ।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও জেলার সূর্যপূরী আম সারাদেশে ব্যাপক পরিচিত। এখানকার আমে পোকা থাকে না। এটা এখানকার বিশেষ বৈশিষ্ট্য। আমের আকার ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। এছাড়াও গৌরমতি,বারি-৪,ব্যানানা ম্যাঙ্গো,ইত্যাদি জাতের বারমাসি বাগান করে ২/১জন চাষী বেশি দামে আমি বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
সান নিউজ/এএন