বিনোদন ডেস্ক: ২ সহস্রাধিক গানের রচয়িতা প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার ছিলেন একাধারে একজন চিত্রনাট্যকার, চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, গীতিকার ও সুরকার। ২০২২ সালের এ দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই কিংবদন্তি।
আরও পড়ুন: ভোলায় শিশুদের চিত্রাঙ্কন-আবৃত্তি প্রতিযোগীতা
গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সাল থেকে তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন তিনি। তার গানে মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, প্রেম, বিরহ, স্নেহসহ নানা প্রসঙ্গ উঠে এসেছে।
বিবিসির জরিপ অনুসারে, সর্বকালের সেরা ২০ টি বাংলা গানের তালিকায় সর্বোচ্চ ৩ টি গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। সেগুলো হলো- ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল’ ও ‘একবার যেতে দে না’। সেই সূত্র ধরেই তাকে বাংলা গানে সর্বকালের সেরা গীতিকার বললে মোটেও ভুল হবে না।
আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই দেয়াল পত্রিকায় কবিতা লিখতেন তিনি। ৬০-এর দশকের শুরুতে তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়াশুনা শুরু করেন। ২০১৩ সালে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে গাজী মাজহারুল আনোয়ার কীভাবে কবি থেকে গীতিকবি হয়ে উঠলেন, সেটির বর্ণনা উঠে আসে।
সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হলাম, সেখানে একটা নাটক হওয়ার কথা। এতে একটা গানের প্রয়োজন হয়েছিল। গানটা সে সময়কার প্রখ্যাত আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখার কথা ছিল।
আরও পড়ুন: অন্ধকার কাটিয়ে শোক হোক শক্তি
কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে তিনি গানটা লিখতে পারেননি। আমি সেই সময় নাটকের পরিচালককে বললাম, আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে একটু ট্রাই করে দেখতে পারেন। তারপর আমি একটি গান লিখে ফেললাম।
গীতিকার আরও বলেন, সেই গানটি গেয়েছিলেন প্রখ্যাত শিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন। এভাবেই রেডিওতে গানের রচয়িতা হিসেবে তার অভিষেক। যদিও সেই গানটির রচয়িতা হিসেবে তার নাম যায়নি। এরপর থেকে নিয়মিত রেডিওতে গান লেখা শুরু করেন তিনি।
আরও পড়ুন: সাহিত্য জীবনের কথা বলে
গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা গান গেয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় বেশ কয়েকজন শিল্পী সঙ্গীতের ক্যারিয়ারে সফলতা পেয়েছেন। তার জনপ্রিয় অনেক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন- প্রয়াত কণ্ঠশিল্পী শাহনাজ রহতমতউল্লাহ, রুনা লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদি ও সাবিনা ইয়াসমিন।
প্রথম যে গানটির মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে শিল্পী রুনা লায়লার অভিষেক হয়েছিল, সেটি তার লেখা ‘গানেরই খাতায় স্বরলিপি’।
আরও পড়ুন: সাহিত্যচর্চায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে ‘নতুন এক মাত্রা’
এই কিংবদন্তির রচিত কিছু কালজয়ী গান হলো-‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’, ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’, ‘একতারা তুই দেশের কথা বল রে এবার বল’, ‘একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয়’, ‘গানের খাতায় স্বরলিপি লিখে’, ‘আকাশের হাতে আছে একরাশ নীল’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা’, ‘ইশারায় শীষ দিয়ে’, ‘চোখের নজর এমনি কইরা’, ‘এই মন তোমাকে দিলাম’, ‘চলে আমার সাইকেল হাওয়ার বেগে’ প্রভৃতি।
১৯৮২ সালে তিনি চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তার নির্মিত প্রথম সিনেমার নাম ‘নান্টু ঘটক’। এরপর ‘শাস্তি’, ‘স্বাধীন’, ‘চোর’, ‘সন্ধি’, ‘স্বাক্ষর’, ‘শর্ত’, ‘সমর’, ‘শ্রদ্ধা’, ‘স্নেহ’, ‘আম্মা’, ‘পরাধীন’, ‘তপস্যা’, ‘উল্কা’, ‘ক্ষুধা’, ‘রাগী’, ‘আর্তনাদ’, ‘জীবনের গল্প’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘পাষাণের প্রেম’ ও ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’ সিনেমাগুলো নির্মাণ করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ভোলায় পুলিশের বইয়ের মোড়ক উম্মোচন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখায় দেশের প্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল’ লাভ করেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ২০০২ সালে তিনি একুশে পদক পান।
২০২১ সালে তিনি পেয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কার। এছাড়া ৫ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন এই কিংবদন্তি গীতিকার।
সান নিউজ/এনজে