সান নিউজ ডেস্ক: জয় গোস্বামী বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে আবির্ভূত একজন আধুনিক প্রখ্যাত বাঙ্গালী কবি। ভারতীয় পশ্চিম বাংলার এই কবি বাংলা ভাষার উত্তর- জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় কবি হিসাবে পরিগণিত। তার কবিতা চমৎকার চিত্রকল্পে, উপমা এবং উৎপ্রেক্ষায় ঋদ্ধ।
জয় গোস্বামী দু’বার আনন্দ পুরস্কার লাভ করেছেন। বজ্রবিদ্যুৎ-ভর্তি খাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেন। তার কবিতার একটি বিখ্যাত পংক্তি ‘‘অতল তোমার সাক্ষাৎ পেয়ে চিনতে পারিনি বলে / হৃদি ভেসে গেল অলকানন্দা জলে'’’।
জয় গোস্বামী আসলেই একজন বাঙালি শেকড়ের কবি এবং সাহিত্যিক । জয় গোস্বামীর জন্ম ১৯৫৪ সালের ১০ই নভেম্বর কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তার পরিবার রানাঘাটে চলে আসে। তখন থেকেই তার স্থায়ী নিবাস সেখানে।
তাঁর পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তার পিতার মৃত্যু হয়। তার মা শিক্ষকতা করে তাকে লালন পালন করেন। মা ছিলেন রাণাঘাট লালগোপাল স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা।
কবি প্রথাগত শিক্ষার ফাঁস ছিড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন স্কুলের ১১ ক্লাস পড়তে পড়তেই। তার প্রথম কবিতা সিলিং ফ্যান। তার প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় তিনটি লিটিল ম্যাগাজিনে – “সীমান্তে সাহিত্য”, “পদক্ষেপ” এবং “হোম শিখা”।
১৯৭৬ সালে তার কবিতা দেশ পত্রিকায় প্রথম বার ছাপা হয়। পরে তিনি ঐ পত্রিকাতেই একজন সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। দেশ পত্রিকায় অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
জয় গোস্বামী ১৯৮৯ সালে কাব্যগ্রন্থ “ঘুমিয়েছ ঝাউপাতা”র জন্য আনন্দ পুরস্কারে ভূষিত হন, ১৯৯৭ সালে ভূষিত হন বাংলা একাদেমি পুরস্কারে “বজ্র বিদ্যুৎ ভর্তি খাতা”র জন্য এবং সাহিত্য একাদেমি পুরস্কার পান “পাগলী তোমার সঙ্গে”র জন্য।
জয় গোস্বামী এ যুগের অন্যতম জনপ্রিয় এবং শক্তিশালী কবি। তার কবিতা সম্বন্ধে আমাদের নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই মনে করি। তার লেখা উপন্যাসের মধ্যে “মনোরমার উপন্যাস”,”সেই সব শেয়ালেরা”, “সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা” ইত্যাদি।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস এবং অত্যাচারিতের পাশে দাঁড়ানো জয় গোস্বামীর অন্যতম গুণ। গুজরাতের দাঙ্গার পর জয় গোস্বামীর কবিতায় ধিক্কার আমরা দেখেছি।
সিঙ্গুর এবং নন্দীগ্রামের জমি বাঁচাও আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীকে সরাসরি তার কবিতায় ধিক্কার জানিয়েছেন। এই কবিতা নিয়ে, “বিজল্প” প্রকাশিত তার ১৫টি কবিতার বই “শাসকের প্রতি” ।
এর আগেও কবি নানা সময় নানা বিষয়ে তার প্রতিবাদ দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশ করেছেন। একবার তার কন্যার ইস্কুলের কতৃপক্ষকে বাংলায় চিঠি লেখায়, তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে।
তারা জানায় যে তারা নাকি শুধু ইংরেজীতেই লেখা চিঠি গ্রহণ করে থাকে এবং বাংলায় চিঠি গ্রহণ করতে তারা বাধ্য নয়। এর প্রতিবাদে কবি তার কন্যাকে কলকাতার কসবা অঞ্চলের সেই নামী স্কুল থেকে তুলে এনে অন্যত্র ভর্তি করিয়েছিলেন।
সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম আন্দোলনে কবির প্রকাশ্য বিরোধী ভূমিকার ফলস্বরূপ তাকে তার দীর্ঘদিনের কাজে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে আসতে হয়েছে।
জয় গোস্বামী কিছু কবিতা গ্রন্থ হলো, ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ, প্রত্নজীব, আলেয়া হ্রদ, উন্মাদের পাঠক্রম, ভূতুমভগবান, ঘুমিয়েছো, ঝাউপাতা?, আজ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো, বজ্র বিদ্যুং ভর্তি খাতা, ওহ স্বপ্ন, পাগলী, তোমার সঙ্গে, পাতার পোষাক, বিষাদ ইত্যাদি।
জয় গোস্বামীর কিছু উপন্যাস হলো, হৃদয়ে প্রেমের শীর্ষ, মনোরমের উপন্যাস, সেইসব শেয়ালেরা (১৯৯৪)
সুড়ঙ্গ ও প্রতিরক্ষা, রৌদ্রছায়ার সংকলন, সংশোধন বা কাটাকুটি, সাঁঝবাতীর রূপকথারা, দাদাভাইদের পাড়া, ব্রহ্মরাক্ষস, সব অন্ধকার ফুলগাছ ইত্যাদি।
আজ খ্যাতিমান ভারতীয় কবি জয় গোস্বামীর জন্মদিন। আজকের এই দিনে তাকে অনেক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা রইলো।
সূত্র: তক্ষশীলা
সান নিউজ/এফএইচপি