পি আর প্ল্যাসিড: বিবেকবার্তা প্রথম ছিল বিবেক নামে। পরবর্তীতে এটি হয়ে যায় বিবেকবার্তা। ম্যাগাজিন থেকে ট্যাবলয়েড সাইজ পত্রিকা। পরবর্তীতে অনলাইন ভার্সন। মিতুলের এই অনলাইন পোর্টাল জাপানে বাংলা প্রথম অনলাইন পত্রিকা হিসেবে আত্ম প্রকাশের পর থেকে একটি গ্রুপ এটার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগে। কতিপয় প্রবাসী জনে জনে ফোন কল করে তাদেরকে বলা হয়, কেউ যেন বিবেবকার্তার লিংকে ব্রাউজ না করে।
আবার অনেককে টেলিফোন করে এটাকে বলা হয় যে, বিবেকবার্তার এই সাইটে ভাইরাস আছে। কেউ ব্রাউজ করলে তার কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে। কাউকে এতে বিজ্ঞাপন দিয়ে যেন আর্থিক সহযোগিতা না দেয় সে বিষয়েও আপত্তির শেষ ছিল না। তাদের ষড়যন্ত্রের সব বিষয়ই আবার সময় মতো মিতুলের কানে চলে আসে।
মিতুল তাদের এসব ষড়যন্ত্রের কথা শোনার পর মনে মনে ভাবে যারা বলে এবং যারা তাদের কথা বিশ্বাস করে তারা উভয়ই পাগল এবং বোকার স্বর্গে বাস করছে। ইন্টারনেট সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানটুকু থাকলে তাদের, এমন অপপ্রচারে সময় নষ্ট তারা করতো না। আবার যারা বিশ্বাস করছে তারা কখনোই মিতুলের কোনো কাজে আসবে না ভেবে তাদের নিজের দলে ভিড়ানোর চেষ্টা করে সময় নষ্ট করে নি। যে কারণে সব কিছু বোঝার পর সে বরাবরই তার ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে ব্যস্ত রাখে নিজেকে।
যতো দিন যেতে থাকে ততোই যেন তার কাজ করার পথ সুগম হয়। মানুষ তাকে চিনছে এবং তার ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে মূল্যায়ন করতে শুরু করে। এমনকি দেশ বিদেশে তার পরিচিতি বাড়তে থাকে দ্রুত। এর অল্প কিছু দিনের মধ্যে সে লেখালেখি করে অনেক মিডিয়াতেও পরিচিতি লাভ করে।
অন্যরা যখন দেখছে, কোন ভাবে মিতুলকে তার কাজে বাঁধা দিয়ে আটকানো যাচ্ছে না উপরন্তু তার কর্ম ক্ষেত্র বিস্তার লাভ করছে তখন হক নামের এক লোকের মাধ্যমে টোকিওতে মিতুলের বিরুদ্ধে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেটার বিষয়বস্তু দেয়া হয় "হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আলোচনা সভা"। কমিউনিটির সকলকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানানো হয় সেই সভায়।
টোকিওরই একজন তাদের এই নোটিশ দেখে মিতুলকে জানায় যে, তাদের এই প্রচার বা আয়োজন তার বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করতে করা হচ্ছে এবং এর মূল উদ্যোক্তা কারা তাদের নামও জানায় তাকে। সে কাউকে কোন কিছু না বলে তার বিবেকবার্তার পোর্টালেই সেটা আবার পোস্ট দেয় আরো বেশি প্রচারের জন্য।
যেদিন তার বিরুদ্ধে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় সেদিন টোকিওর পাশের প্রিফেকচার ছাইতামাতে একটি সংগঠনের জমায়েত হয়। মিতুল সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে উপস্থিত হলে তাকে তার পরিচিত কয়েকজন বলতে থাকে, তার বিরুদ্ধে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে অথচ সে তার পোর্টালে এটা পোস্ট দেবার কারণ কি?
মিতুল তাদের বোঝায়, এটাই সাংবাদিকতা। এক পক্ষ বিরোধীতা করবে আরেকপক্ষ তাদের প্রতিপক্ষ ভাববে। এ না হলে কাজ করে মজা নেই। তা ছাড়া সময় হলে মানুষ এমনিতেই বুঝতে পারবে যে, এর পিছনে কে বা কারা এবং কেন এই ষড়যন্ত্র করেছে।
এরপর তারা মিতুলের কাছে জানতে চায় সে আলোচনা সভায় যাবে কিনা। মিতুল বলল, যদিও আমাকে তারা এখন পর্যন্ত কিছুই বলেনি সুতরাং যাবে না ভেবেছিল। কিন্তু অনেক ভেবে দেখেছি, সভায় তার যাওয়া উচিত। গেলে পরে ওরা বুঝবে কে আসল আর কে নকল। আমি সেখানে গিয়ে উপস্থিত হলেই যারা আমার বিষয়ে জানে না তারাও বুঝতে পারবে আমার মধ্যে কোন গড়লতা আছে কি নেই।
আমার বিরুদ্ধে এই হক গ্রুপ যা অপপ্রচার করছে সেটার ভিত্তি কতোটা আছে বা নেই। তা পরিষ্কার বুঝতে পারবে। শুধু তাই নয়, তারা এটাও বুঝতে পারবে যে, টোকিওর এই কমিউনিটিতে কে কি করছে এবং কেন করছে সবই মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
যাবার আগে মিতুল তার শুভাকাঙ্খীদের কয়েকজনের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি নিয়ে। তারা মিতুলকে সমর্থন দিয়ে বলে, আমরা আছি আপনার সাথে। আপনি ওদের সেই সভায় যাবেন। দেখি কে কি বলে আপনাকে।
তাদের কথা শোনার পর মিতুলের সাহস অনেক বেড়ে যায়। তাই যখন তাদের সভা শুরু হয় তার কিছু সময় পর সুবিধা মতো সভা কক্ষে গিয়ে হাজির হয় মিতুল। সভা স্থলে মিতুল যাবার সাথে সাথে তার শুভাকাঙ্খীদের এক বিশাল গ্রুপ সেখানে তার পিছন পিছন গিয়ে উপস্থিত হয়। তাদের উপস্থিত হতে দেখে আগে থেকে যারা উপস্থিত ছিল, তাদের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়।
এরপর তারা অনেকটা ভয় পেয়ে যায় এই ভেবে যে, আবার না কোনো অঘটন সেখানে ঘটিয়ে বসে মিতুলের সাথে যারা গিয়ে উপস্থিত হয়েছে তারা। সেখানে প্রায় আশিজন লোকের উপস্থিতি। মিতুল একটা চেয়ার খালি দেখে তাদের মাঝখানেই সেখানে গিয়ে বসে। সে বসলে পর তার সাথে অন্য যারা এসে উপস্থিত হয়েছেন তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে হলের পিছনে রাখা চেয়ার টেনে এনে সভা স্থলে বসলে যে যার মতো করে আলোচনা করে তাড়াহুড়ো করে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করে।
মিতুলদের কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টো এড়িয়ে গেলে মিতুল কথা বলার জন্য তাদের কাছে মাইক চায়। তাকে সভা শেষ হয়ে যাবার কথা বলে মাইক আর তার হাতে দেয় না। তারপরেও জোর আপত্তি করলে বাধ্য হয়ে সভার সভাপতিত্বকারী মঞ্জুরুল হক তাকে কথা বলার জন্য মাইক দিতে বলে।
মিতুল মাইক হাতে নিয়ে প্রথমেই বলল, আমার বিরুদ্ধে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে অথচ আমাকেই জানানো হয়নি, তার মানে কি? আপনাদের কাছে আমার একটি প্রশ্ন, এখানে আপনাদের যারা উপস্থিত আছেন, আপনারা সকলেই কাপুরুষ নাকি হিজড়া?
এমনকি আমি এখানে এসে উপস্থিত হয়েছি আমাকে কোনো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে আপনারা আমার বিরুদ্ধে কথা বলে সভা শেষ করে দিচ্ছেন এটাই বা আপনাদের কেমন আচরণ?
আপনিই বা কেমন সাংবাদিক, মি. হক? ধরেই নিলাম আপনারা আমার বিরুদ্ধে এখানে যা কিছুই আলোচনা করেছেন তার সবটাই সত্য। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করলাম আপনাদের কাছে। যদি এর প্রমাণ দিতে পারেন আমি আপনাদের দেয়া শাস্তি মেনে নিতে প্রস্তুত আছি, কথা দিলাম। আর যদি প্রমাণ দিতে না পারেন তাহলে পাঁচশ মান ইয়েন জরিমানা দিতে হবে। আর যদি ভদ্র বাবা মায়ের সন্তান হয়ে থাকেন সবার সামনে ক্ষমা চাইতে হবে আমার পায়ে ধরে।
এ কথা বলার পর আর কেউ কোনো কথা বলার সাহস পায়নি। সেদিনের মতো সভা শেষ করে দিয়ে বলা হয়, পরে আবার তাকে বিস্তারিত জানানো হবে। হলের সময়সীমা কম ছিলো বিধায় হলের বাইরে এসে আবার কথা বলতে শুরু করে তারা। মিতুল প্রথমেই ধরে সেই হককে। যার পুরো নাম মঞ্জুরুল হক। আবারো তাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় মিতুল। সভার শেষ প্রান্তে এসে যেরোম গমেজ নামে একজনের ফ্যাক্স বার্তা পাঠ করা হয়। ফ্যাক্স বার্তা পাঠ করে মিল্টন।
ফ্যাক্স বার্তায় বলা হয় মিতুল টোকিওতে বড়দিনের অনুষ্ঠান করার নাম করে এখানে মানুষের কাছ থেকে টাকা চাঁদা নিয়ে তা আত্মসাৎ করেছে। মিতুল এই কথা শোনার পর বলল, কে এই গমেজ যে এই সভায় উপস্থিত না থাকার পরেও তার ফ্যাক্স বার্তা পাঠ করে তাকে এতো গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে? আপনাদের সাহস থাকলে চাঁদা বাজির এই ঘটনা আইন-আদালতে বিচার দিক। আমি এই বিষয় নিয়ে আদালতে যেতে রাজি আছি। যদি সে এটার কোনো প্রমাণ দিতে না পারে তাহলে পাবলিকলি তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।
এই কথা শোনার পর, কেউ আর মিতুলের বিরুদ্ধে কথা বলে নি সেখানে। এমনকি বাইরে এসেও যে হকের সাথে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছে সেটারও কোনো জবাব দেয় না তাকে। তাদের কয়েকজন মিতুলকে এতোটা সাহস নিয়ে কথা বলতে দেখে কাছে এসে শুধু বলল, আসলে আপনার কোনো দোষ কেউ বলতে পারেনি। কেউ কেউ আপনাকে খুব হিংসে করে। আপনি একা এতো কিছু করে যাচ্ছেন এরা সবাই মিলে তা করতে পারছে না, এজন্য আপনাকে অপদস্ত করার জন্য জোট করেছে।
মিতুলকে তখন তার সামনে এসে একজন সেই কালপ্রিট গুলোর নাম বললে মিতুল রেগে বলল, এগুলো তো বেজন্মা। বাবা মায়ের জারজ সন্তান সুতরাং এরা এর চেয়ে বেশি আর কি করতে পারে বোঝেন না? সেদিন সেখান থেকে বীরের মতো মিতুল ফিরে আসে তার বাসায়।
এর কিছুদিন পর মিতুল তার পত্রিকার পরের সংখ্যা ঢাকা থেকে প্রিন্ট করে নিয়ে আসে। সেখানে টোকিওর সেই হলুদ সাংবাদিকতার বিরুদ্ধে আয়োজিত আলোচনা সভার সংবাদ প্রকাশ করে বড় করে। তখন টোকিওর মানুষ সেই লোক দলবদ্ধ হওয়া মানুষ গুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা করতে পারে, টোকিওতে যে কিছু লোক আছে, যাদের কাজই ঘুরে ঘুরে মানুষ সম্পর্কে বাজে মিথ্যা অপপ্রচার করা।
তার মধ্যে একজন হচ্ছে দেশে বৌ আর সন্তান রেখে জাপানে বসবাস করা এক লোক। সে জাপানে বয়স্ক এক মহিলাকে বিয়ে করে বিয়ে ভিসায় থাকে অথচ মানুষদের বলে বেড়ায় সে এখানে সাংবাদিকতার ভিসায় থাকে, আবার বলে রাজনৈতিক ভিসায় থাকে, আরো কতো কি। আবার এটাও বলে যে, জাপানে সে ওয়ার্কিং ভিসা নিয়ে থাকে। যাকে যেভাবে মিথ্যা বলে তাদের মধ্যে মিশে যেতে পারে তাদের সাথেই সুসম্পর্ক রেখে মোড়ল সাজতে চায়। এই লোক হচ্ছে এসবের নাটের গুরু।
এসব লোকটির অনেক অপকর্ম সম্পর্কেই জানে। সব কিছু মিতুল দেখে, শুনে, বুঝেও এসব নিয়ে কোন কথা বলা বা এদের সাথে জোট করা থেকে বিরত থাকে বা বিরোধীতা করতেও অপছন্দ করে। আর তাদের সাথে কোন কিছুতে মিতুল যায় না বলেই তাকে থামানোর জন্য এতো অপ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হয় লোকটি অন্যদের নিয়ে। (চলবে)
লেখক: জাপান প্রবাসী সাংবাদিক
সান নিউজ/এনকে/এমকেএইচ