শিল্প ও সাহিত্য
জাপানের গল্প - ২০

বিয়ের সনদ পাওয়া    

পি আর প্ল্যাসিড

মিতুলের জাপান থেকে যাবার কোনো পরিকল্পনা শুরুতে ছিল না। থেকেই গেলো যেহেতু তাই প্রতিনিয়ত জাপানে প্রবাস জীবন তার দীর্ঘ হতে থাকে। কিন্তু বৈধতা নেই জাপানে থাকার। অনেক আগেই সে তার এই বৈধতা হারিয়েছে। এর মধ্যে জাপানের ইমিগ্রেশন পুলিশ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে রেড দিয়ে ধরে ধরে নিজেদের দেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে অবৈধ ভাবে থাকা বিদেশিদের।

মিতুল দীর্ঘ দিন জাপানে থেকে তার যে অবস্থান গড়ে তুলেছে এতে সে চায় না আর দেশে ফিরে যেতে। তাই নিজের শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের জন্য আলাদা সময় বের করে। এই সময়টুকুতে সে জাপানি মেয়েদের সাথে নতুন করে ভিন্ন ভাবনায় বন্ধুত্ব করতে মন দেয়। এই বন্ধুত্বের সূত্র ধরেই বিয়ে করার পরিকল্পনা আঁটে মনে। কিন্তু চাইলেই কি আর জাপানে মেয়েরা বিয়ে করতে পারে একজন বিদেশি ছেলেকে? একজন বিদেশি ছেলে চাইলেই জাপানে কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারে না।

জাপানে মেয়ে ছেলে উভয়েই বন্ধু হিসেবে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। বেশি হলে লিভ টুগেদারের সুযোগ রয়েছে এখানে। কিন্তু বিয়ে করে অফিসিয়ালি দায়িত্ব নেবার বিষয়ে অনেক পিছিয়ে থাকে তারা। এর মধ্যেই মিতুল বুকে দম নিয়ে ইচ্ছে পূরণ করতে মাঠে নামে। যেহেতু নানা ধরনের কর্মকান্ডর সাথে মিতুল জাপানে জড়িত তাই জাপানে মেয়েদের সাথে পরিচয় সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই রয়েছে। কিন্তু তাদের কাউকে বিয়ে করার মতো সম্পর্কে জড়ানো তত সহজ নয়। বন্ধুত্ব পর্যন্ত ঠিক আছে।

যখনই মিতুল বিয়ের কথা ভাবে তখন সে যেন আর মেয়ে পায় না খুঁজে। বাধ্য হয়ে তার মেয়ে বন্ধুদেরকেই বলতে শুরু করে জাপানে সে বিয়ে করতে আগ্রহী কিন্তু বিয়ের পাত্রী খুঁজে পায় না আর সে। তাই তাদের বিয়ে করার জন্য প্রাত্রী খুঁজে দিতে রসিকতা করে অনুরোধ করে।

এমন কথা শুনে তার মেয়ে বান্ধবীদের কেউ কেউ আবার নিজেরাই প্রার্থী হতে এগিয়ে আসে। কিন্তু তাদের অতীত এবং বর্তমানের কথা ভেবে মিতুল মনে করে তাদের সাথে সংসার করা তার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। যেহেতু মিতুল বাঙালি ছেলে। বাঙালি সংস্কৃতির বাইরে সে যেতে পারবে না। তাই তার জন্য দরকার একজন প্রকৃত বধূ হবার মতো মেয়ে।

কপাল ভালো মিতুলের। এর মধ্যেই পরিচয় হয় তার খামিজো নামের এক মেয়ের সাথে। টোকিওর বাইরে তার বাড়ি। কাজ নিয়েছে টোকিওতে অথচ থাকার ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত করতে পারেনি। ভাবে কোথাও কারো সাথে কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করতে পারলে তার খরচ কমানো যাবে।

মিতুল থাকে একা। মিতুলের সাথে খামিজোর পরিচয় হলে তার বাসায় একদিন আসে বেড়াতে। বেড়াতে এসে ভালো লেগে যায় তার মিতুলকে। খামিজো ভাবে এখানে সে থাকার বিষয়টি প্রস্তাব করে দেখতে পারে। যেহেতু পাশের রুম খালি আছে সুতরাং শেয়ার করতেই পারে তারা। তাছাড়া পাশাপাশি রুম শেয়ার করার বিষয়টি জাপানে খারাপ কিছু না। তাই প্রথম দিনেই মিতুলকে প্রস্তাব করে তার বাসায় রুম শেয়ার করার বিষয়।

সেদিন মিতুল আর কোনো সিদ্ধান্ত খামিজোকে দেয় না। যদিও সেদিন তারা অনেক রাত পর্যন্ত একসাথে বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছে তারপরেও বাসায় রাত কাটানোর বিষয় বলেনি মিতুল। মিতুল কৌশলে খামিজোর সাথে সময় দিয়ে তার সম্পর্কে এবং তার পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করে সেদিন।

খামিজোর বাবা একসময় ছিলেন জাপানের জাতীয় খেলা ব্যাজবল প্লেয়ার। তার দলের ছবি অনেকবার জাপানের পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে। তার বাবার ইন্টারভিউও রয়েছে অনেক পুরোনো পত্রিকার পাতায়। এসব খামিজো সব কিছু সুন্দর করে কেটে ফাইলের মধ্যে যত্ন করে রেখেছে। এসবের কথা মিতুলকে বললে মিতুল দেখার আগ্রহ নিয়ে পরের বার আসার সময় সাথে নিয়ে আসার অনুরোধ করে। অনুরোধ করলে সেদিনের পর আবার যখন মিতুলের বাসায় আসে তখন সাথে করে নিয়ে এসে মিতুলকে দেখায় খামিজো।

খামিজোর বড় এক ভাই রাশিয়াতে পড়ালেখা করেছে। যে কারণে রাশিয়ান ভাষাও খুব ভালো জানে। জাপানে বাংলাদেশের মতো মঞ্চ নাটকের একজন ভালো পারফর্মার খামিজোর সেই ভাই। শুধু তাই নয়, রাশিয়া থেকে বড় কোনো রাষ্ট্রীয় অতিথি এলে তাদের দো-ভাষীর কাজ করে তার ভাই। এতো কিছু শোনার পর মিতুল মনে মনে ভাবে, তাদের পরিবার যেহেতু সংস্কৃতি মনা এবং এসব কর্মকান্ডই করছে বেশি সুতরাং মেয়ে হিসেবে খামিজো খুব যে খারাপ হবে তা নয়। আর এজন্যই বিদেশের মাটিতে মিতুলের এই লেখালেখি আর সংস্কৃতিক কর্মকান্ডের বিষয় গুলোর গুরুত্ব দিবে হয়তো খামিজো।

মিতুল ভাবে খামিজো আর যেমনই হোক মিতুলের যে কর্মকান্ড সেসব কাজে বাঁধা দেবার মতো মানসিকতা তার নেই এবং মূল্যায়ন করার মতো মেধা তার মধ্যে উপস্থিত। এসব ভেবে খামিজোকে আবার বেড়াতে আসার দাওয়াত দেয়। এদিকে খামিজো তার কাজে যোগদান করতে দেরি করছে বাসা ঠিক না করা পর্যন্ত। টোকিও থেকে আসা যাওয়া করে অনেক সময় লেগে যাবে তার। তাই ধারে কাছে থাকার কথা চিন্তা করছে। সেই কথা চিন্তা করেই খামিজো সহজে কোথাও রুম শেয়ারের কথা ভাবে। কিন্তু এতো অল্প সময়ে তারা একে অপরকে বিশ্বাস করতে পেরে যতটাই কথা হয় তাতে মিতুল মনে করে খামিজোকে বিয়ে করে গৃহিনী করলে আপাত দৃষ্টিতে ক্ষতির সম্মুখীন হবে না সে।

এদিকে জাপানের বিভিন্ন শহর অঞ্চলে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে বসবাসরত বিদেশিদের ধরে নিজেদের দেশে পাঠানোর সংবাদ শুনতে পায় মিতুল প্রতিনিয়ত। তার অনেকটা আবার টেলিভিশনেও প্রচার করা হয়, যা দেখে সে চিন্তা করে বিয়ে যদি করতেই হয় তাহলে যতো দ্রুত সম্ভব হয় ততো দ্রুতই সেরে ফেলবে সে বিয়ের কাজটি। এটা ভেবে খামিজোকে সরাসরি প্রস্তাব করে, তুমি আমার ঘরে রুম শেয়ারে যাবার কথা না ভেবে আমার সাথে বিয়ের কথা ভাবতে পারো। আমার পক্ষ থেকে কোনো আপত্তি নেই। তুমি যদি মনে করো তোমার অভিভাবকদের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবে তাহলে তুমি তাই করতে পারো।

খামিজো তার ভাইদের সাথে মিতুলের বিষয় নিয়ে কথা বলে। তার ভাই যেহেতু বিদেশ করা, তাই বিদেশিদের সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা আছে। তাই মিতুলের বিষয় সহজে বোঝাতে সক্ষম হয় খামিজো। এরপর মিতুলের সাথে এক ভাইয়ের দেখা করানোর ব্যবস্থা করে। তখনো সে তার নতুন চাকরিতে জয়েন করেনি। থাকার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত কিছুদিন সময় চেয়ে নেয় খামিজো।

খামিজোর কাজে জয়েন করার আর সপ্তাহ খানেক সময় আছে। এর মধ্যে পারলে সব কিছু গোছাতে হবে মনে করে মিতুল খামিজোর ভাইয়ের সাথে সব কিছু খুলে বলে। এটাও সে বলে যদি এর মধ্যে তাকে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে তাহলে তাদের করণীয় কি হতে পারে, সেটাও। সব বুঝিয়ে বলার পর খামিজো দুইদিনের সময় চেয়ে নেয়। এর মধ্যে তার লাগেজ নিয়ে মিতুলের বাসায় এসে উঠে।

খামিজোকে এভাবে তার লাগেজ নিয়ে এসে বাসায় উঠায় মিতুল দেশে যোগাযোগ করে অনুরোধ জানিয়ে বলল তার এখানে বিবাহ রেজিষ্ট্রশন করতে যা যা ডকুমেন্ট প্রয়োজন সব যেন দ্রুত তৈরি করে পাঠায়। বলার একসপ্তাহের মধ্যে দেশ থেকে মিতুলের প্রয়োজনীয় সকল ডকুমেন্ট ইএমএস এ পাঠিয়ে দিলে সে তার অপেক্ষায় থাকে।

এদিকে খামিজো তার কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়ে সে তার মতো করে কাজ করতে থাকে। সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় আবার রাতে বাসায় এসে খাবার তৈরি করে দু'জন মিলে একসাথে ডিনার করে। এরপর অনেক রাত পর্যন্ত পাশাপাশি বসে টেলিভিশন দেখতে দেখতে যখন চোখে ঘুম নামে তখন একসাথে ঘুমাতে যায় বিছানায়। কখনো কখনো মিতুল যখন বুঝতে পারে তার নিজের কাজ এখনো বাকি রয়েছে তখন উঠে এসে টেবিলে বসে। লেখালেখি, বই পড়া, ভিডিওতে দেশের বাংলা নাটক-সিনেমা দেখা এমন অনেক কিছু করে সে রাত জেগে। সকাল হলে আবার কাজে যেতে হয়। খামিজো আগে কাজের উদ্দেশে বের হলে পর মিতুল বের হয়। রাতে খুব অল্প সময় ঘুমায় সে। তার কথা একটাই, দিনের বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলে জীবনে সে কোনো ভালো কিছু করে সফলতা অর্জন নাও করতে পারে, তাই।

এর মধ্যেই একদিন দেশ থেকে পাঠানো ডকুমেন্ট গুলো পোস্ট অফিস থেকে পিয়ন এসে দিয়ে যায়। যেদিন পোস্ট অফিসের পিয়ন বাসায় এসে ডকুমেন্ট দিয়ে যায় সেদিন খামিজো অন্যদিন থেকে কিছু সময় আগে তার শরীরের অবস্থা ভালো না থাকায় ঘরে ফিরে আসে। এসে সে-ই এই ই এম এস-এর প্যাকেটটি রিসিভ করে। অন্যদিকে মিতুল ঘরে আসে সেদিন অন্যদিন থেকে আরো দেরি করে, রাত দশটার পর। মিতুল ঘরে আসলে খামিজো সাথে সাথে আগে তার দেশ থেকে আসা সেই ডকুমেন্টের বড় খাম তার হাতে দিয়ে বলল, তোমার প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট মনে হয় চলে এসেছে। আগে খুলে দেখ, সবকিছু ঠিক আছে কিনা, ঠিক থাকলে চলো আমরা ওয়ার্ড অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে বিয়ের রেজিষ্ট্রেশনটা আগে করে ফেলি। তা না হলে তোমার রাস্তাঘাটে চলা ফেরা করতে যে অনেক ভয়।

মিতুল মনে মনে খুশির সাথে ভাবে, এতোটা বছর আমি এই ভয়ের মধ্য দিয়েই জাপানে দিন কাটিয়েছি, এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা যেহেতু হয়নি আর মনে হয় হবে না। ভেবেই বলল, এগুলোকে প্রথমে আমাদের জাপানি ভাষায় অনুবাদ করাতে হবে। এরপর জমা দিতে হবে। এখনই জমা দেওয়া যাবে না। এখানে বিদেশিদের এসব ডকুমেন্ট ইংরেজিতে লেখা থাকে বলে সরাসরি জমা নেওয়া হয় না।
খামিজো প্রশ্ন করে, - এসব তাহলে কোথায় নিয়ে কি ভাবে অনুবাদ করাতে হবে?
- টোকিওতেই আমার পরিচিত এক জাপানি লোক কাজটি করে। আমার পরিচিত বলতে বয়ষ্ক এক লোক। অধিকাংশ বাংলাদেশি পাকিস্তানিরা তার কাছ থেকে অনুবাদের কাজটি করায়। শুনেছি লোকটি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় যোদ্ধা ছিলেন। যুদ্ধ শেষে এখন অবসর জীবন যাপন করছেন। ভালো ইংরেজি জানেন। এজন্যই বর্তমানে এই অনুবাদের কাজ করেই তিনি এখন তার দিন চালান।

খামিজো শোনার পর তার পরবর্তী করণীয় কী জানতে চাইলে মিতুল বলল, একদিন তোমার কাজের পরে হলেও আমরা একসাথে এই ডকুমেন্ট নিয়ে যেতে পারি তার কাছে। তাকে কাজটি করতে দিলে কম করে হলেও দুই সপ্তাহ সময় নিতে পারেন। সব কমপ্লিট করে একবারে নিয়ে জমা দিতে হবে ইমিগ্রেশনে। না হলে বারবার ডাকার কারণে দেখা যাবে ইমিগ্রেশন আমাকে ভিসা দিতে দেরি হয়ে যেতে পারে।

দেখা যায় মিতুলের চেয়ে এখন বিষয়টি নিয়ে খামিজোই বেশি ভাবতে শুরু করেছে। তাই সুবিধা অসুবিধার কথা ভেবে খোঁজ খবর নেয় সে। এমনকি জাপানের জাপানি ভাষার পত্র পত্রিকা যেহেতু মিতুল পড়তে পারে না তাই বিদেশিদের নিয়ে লেখা যে কোন সংবাদ পত্রিকার পাতায় প্রকাশ হলে খামিজো বাসায় কাজের পর তা পড়ে শোনায় মিতুলকে। এটা দেখে তার অস্থিরতাও বাড়ে এক সময়। তাই একদিন অফিস ছুটি করে মিতুলকে নিয়ে সেই অনুবাদকের অফিসে যায় খামিজো। গিয়ে লোকটির সাথে দীর্ঘ সময় কথা বলে। এরপর তাদের সাথে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ থেকে আসা সকল ডকুমেন্ট সেই প্যাকেট ধরেই লোকটির হাতে দেয়। দিয়ে আসার আগে লোকটির পুরো ফি অগ্রিম দিয়ে আসে। এরপর তারা যেন অনেকটা হালকা হয়। এখন তাদের শুধু অপেক্ষা করা, ডকুমেন্ট গুলোর অনুবাদ করা কাগজ ফিরে পাবার জন্য। সব কিছু বুঝে পাবার পর তবেই জমা দিবে ইমিগ্রেশনে।

অন্যদিকে মিতুল আগের চেয়ে অনেকটাই বদলে যায় মনে সাহসের দিক দিয়ে। যেদিন খামিজো তার বাসায় এসে উঠেছে সেদিন থেকেই সে মনে করতে শুরু করে যে, জাপানে সে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেছে। সেটাই ছিল তার বিয়ে নামক সামাজিক বন্ধন। সেদিন থেকেই খামিজো হয়ে গেলো তার স্ত্রী। যেহেতু তারা কেবলই লিভ টুগেদার করছেনা। সব আলোচনা করে তবেই ঘরে এসে উঠেছে সুতরাং তারা এখন স্বামী স্ত্রী। জাপানে কোথাও মিতুলের কোনো কিছু ঘটে গেলে খামিজোই তাকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে এগিয়ে আসবে। তাই রাস্তায় চলা ফেরা করতে কোথাও কোনো পুলিশ দেখে আগের মতো আর ভয় পায় না সে, বরং যে কোনো প্রয়োজনে রাস্তায় সবার আগে দৌড়ে যায় পুলিশ বক্সে, পুলিশের সহযোগিতা নিতে। তারাই যেন এখন জাপানে মিতুলের যে কোনো বিপদের বন্ধু।

একদিন খামিজো তাদের বিয়ে রোজিষ্ট্রেশন সংক্রান্ত বিষয় বিশদ খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য দেশ থেকে আসা কোনো ডকুমেন্টই লাগবে না। সেসব ডকুমেন্ট লাগবে কেবল ইমিগ্রেশনে, যখন ভিসার জন্য দরখাস্ত করবে তখন। সেটা হচ্ছে তার ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট। তাই তার দেশ থেকে আসা ডকুমেন্ট ছাড়াই মিতুলকে নিয়ে খামিজো চলে যায় তাদের কাছাকাছি ওয়ার্ড অফিসে।

সেখানে যাবার পর মিতুল জানতে পায়, ওয়ার্ড অফিসে বিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করা এক বিষয় আর ভিসা অন্য বিষয়। বিয়ের রেজিষ্ট্রেশন করাতে তাকে দেশের কাগজ পত্র লাগবে না। তার ছবি নাম ঠিকানা আর স্বাক্ষর হলেই যথেষ্ট। এর বেশি শুধু তাদের দু'জনের হয়ে দু'জন সাক্ষী লাগবে। এজন্য যাবার আগে তারা দু'জন সাক্ষী নিয়ে যায় টোকিওর তোশিমা ওয়ার্ড অফিসে। সেটি ছিলো ইকেবুকোরোতে। যাবার পর তাদের বড় একটা ফরম দেওয়া হয়। সেই ফরম সুন্দর করে খামিজো জাপানি ভাষায় লিখে পুরোটা পূরণ করে স্বাক্ষী দু'জনের স্বাক্ষর সহ দু'জনের স্বাক্ষর দিয়ে অফিস স্টাফের কাছে জমা দেয়। জমা দেবার পর ওয়ার্ড অফিসের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সেটা ভালো করে দেখেন, কোথাও ভুল আছে কিনা। সব কিছু ঠিক থাকলে লাল কালিতে সিল বসিয়ে ভালো করে লাল কালি লাগায়। এরপর সেই অফিসিয়াল সিল ফরমের নির্ধারিত ঘরে লাগিয়ে একটা কপি তাদের ফেরৎ দেওয়া হয়, আরেকটা জমা রেখে দেন। সেটা তারা হাতে পাওয়া মানেই জাপানে তাদের বিয়ের রেজিষ্ট্রি করা হয়ে যায়।

সেই কাগজই হয়ে যায় দু'জনের বিয়ের আইনগত ডকুমেন্ট বা সনদ। মিতুল আর খামিজো তখন থেকেই বৈধ স্বামী স্ত্রীর মর্যাদা পায় জাপানে। তখনই ওয়ার্ড অফিসে ঘোষণা করা হয় তাদের নাম। নাম বলে তাদের আজ বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হবার কথা বললে, ওয়ার্ড অফিসের সকলে এক সাথে হাতে তালি দিয়ে মিতুল আর খামিজোকে অভিনন্দন জানায়। এরপর খামিজো সেই সনদ হাতে নিয়ে মিতুলের হাতে তুলে দেয়। মিতুল খামিজোর মুখের দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট মুচকি হাসি হেসে জড়িয়ে ধরে দু'জন দু'জনকে। এরপর দু'জন দু'জনকে কিস করে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে।

(চলবে)

লেখক, জাপান প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক।

Copyright © Sunnews24x7
সবচেয়ে
পঠিত
সাম্প্রতিক

সবজির বাজারে স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে কমেছে পেঁয়াজ, সবজি...

স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা, নারী আটক

জেলা প্রতিনিধি : সাভারের আশুলিয়ায় জীবিত স্বামীকে বৈষম্যবিরোধ...

বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা 

বিনোদন ডেস্ক: ঢাকাই চিত্রনায়িকা ও মডেল পূজা চেরি ডজনখানেক ছব...

বৈষম‌বিরোধী আন্দোলনে বেঁচে ফেরার আশা করেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতন আন্দোল&zwnj...

ইসলামী ব্যাংকের সাথে হাব-এর মতবিনিময়

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি-এর উদ্যোগে হ...

সাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছ...

ফের বাড়ল সোনার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বাজারে ফের সোনার দাম বাড়ানোর ঘোষণা...

ফের হারলো সাকিবের দল

স্পোর্টস ডেস্ক : আবুধাবির টি-টেন টুর্নামেন্টে ফের হারের মুখ...

নোয়াখালীতে দুই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার

নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীতে পৃথক স্থান থেকে দুই গৃহবধূর...

ঢাকাবাসীকে নিরাপদ রাখতে হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ঢাকাবাসীকে যেকোনো উপায়ে নিরাপদ রাখতে হবে...

লাইফস্টাইল
বিনোদন
sunnews24x7 advertisement
খেলা