পি আর প্ল্যাসিড
মিতুলকে যেভাবে ঠিকানা দিয়ে বলা হয়েছিল গেস্ট হাউজ থেকে বের হয়ে সেই বাঙালির কাছে যেতে, সেভাবে সে যায়নি। গেস্ট হাউজ থেকে বের হবার সময় ভয়ে ভয়ে বের হতে গিয়ে ঠিকানা লেখা কাগজটি ঘরে তার বিছানার উপর ফেলে রেখে যায়। যে কারণে কাছাকাছি রেল স্টেশন পর্যন্ত যেতে পারলেও গন্তব্য পর্যন্ত আর পৌঁছাতে পারেনি সে। কোনো কিছু চিন্তা না করে অনুমানের উপর সামনে আসা ট্রেনে চড়ে বসে মিতুল। সে মনে করেছিল এখন যে ট্রেন আসছে সেটাতে চড়ে বসলে হয়তো তার গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে, এতোটাই বোকা বা বেখেয়ালি ছিল সে। এদিকে ট্রেন তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে চলতে থাকলেও মিতুল বাস্তবে নিরুদ্দেশ যাত্রা শুরু করে।
একসময় কয়েক স্টেশন পর গিয়ে ট্রেন থামলে একই কম্পার্টমেন্টে কয়েকজন বিদেশিকে উঠতে দেখে সে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে যায় তাদের সাথে কথা বলার জন্য। কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই তাদের নিজেদের মধ্যে বাংলায় কথা বলতে শুনে বুঝতে পারে তারাও বাংলাদেশি। তাই তাদের কাছে মিতুল বিস্তারিত সব খুলে বললে তারা আন্তরিকতার সাথে মিতুলকে গ্রহণ করে। পরে বিদেশের মাটিতে অসহায় মনে করে তাদের সাথে বাসায় নিয়ে যায় মিতুলকে।
তাদের সাথে নিয়ে গেলেও প্রথম কয়েকদিন তাদের সাথেই বাসায় থাকে মিতুল। এক বাসায় ওরা তিন জন থাকে। বাসায় দু'টো রুম, একটাতে থাকে দু'জন অন্যটাতে থাকে একজন। তাই তাদের মধ্যে মিতুলকে নিয়ে আলোচনা করে। আর বলে, তাদের সাথে এক ফ্যাক্টরিতে মিতুলকে চাকরি দিতে পারলে সবাই মিলে-মিশে এক বাসাতেই থাকতে পারবে। এটা মনে করে মিতুলকে তাদের সাথেই থেকে যেতে প্রস্তাব করে।
একজন বাঙালি ভাইকে উপকার করবে মনে করে ফ্যাক্টরির মালিকের কাছে তারা তিনজন মিলে মিতুলকে কাজে নেবার জন্য অনুরোধ জানায়। একই দেশের, তা ছাড়া এক বাসায় থাকলে তাদের প্রতিমাসের খরচ বাঁচবে, তাদেরও ভালো লাগবে মনে করে মালিক সাথে সাথে রাজি হয়ে মিতুলকে পরের দিন কাজে নিয়ে যাবার কথা বললেন। কাজের শেষে বাসায় এসে সেই রাতে মিতুলকে যখন কাজের বিষয় ওরা ব্যাখ্যা করে, মনে মনে তখন মিতুল নিজের স্ট্যাটাস সম্পর্কে ভাবে। দেশে সে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে, তা ছাড়া সে ছিল ছাত্রনেতা। এখানে এসে তাকে এই ফ্যাক্টরিতে শ্রমিকের কাজ করতে হবে? এ কি করে হয়? তাই সাথে সাথে সে আর সম্মতি না দিয়ে কৌশলে তাদের কাছে একদিনের সময় চায়। একদিনে সে তার ঘরে কিছু কাজ আছে, সেসব কাজ করার কথা ভাবে। এর পরের দিন তাদের সাথে যাবে সে ফ্যাক্টরিতে মালিকের সাথে কথা পাকা করে কাজ করার জন্য।
মিতুলের সাথে কথা বলার পর তার সম্মতি পেয়ে তাদের একজন যেভাবে মালিকের কাছে তার সম্পর্কে উপস্থাপন করতে বলে, সাথের সবাই এক সাথে মালিককে সেভাবেই বলল। বলার পর মালিক মিতুল সম্পর্কে সব জেনে মালিক মনে করলেন এখন পর্যন্ত যেহেতু মিতুলের জাপানে বৈধভাবে থাকার ভিসা আছে তাই তাকে ওভার স্টে না করিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসে যাবেন। সেখানে গিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসারের সাথে মিতুলের ভিসা বাড়ানোর বিষয়ে পরামর্শ করবেন। এতে তার ভিসার স্ট্যাটাস যদি কোনোভাবে পরিবর্তন করিয়ে বাড়ানো যায়, তাহলে তাই করবেন। এবং এটাও মনে করেন ভিসার স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে কোনভাবে তাকে বৈধভাবে জাপানে রাখা গেলে তার জন্যই ভালো।
মিতুলের সাথে কথা বলার পর মালিক তার পরিচিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেখানে বিদেশি শ্রমিক বৈধ এবং অবৈধভাবে কাজ করছে, তাদের ভিসা সংক্রান্ত নানা বিষয়-বিশদভাবে জেনে নেন। এরপর ভাবেন, মিতুলের ভিসা টিকিয়ে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে তাকে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো কোনো কাজ হতে পারে। এসব চিন্তা করে ইমিগ্রেশনের স্মরণাপন্ন হন প্রতিষ্ঠানের মালিক।
পরেরদিন সকালে যখন মিতুল কাজে যায় তখন মালিক মিতুলকে প্রথমে অফিসে বসিয়ে তার ভিসা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কথা বলেন। কথা বলার সময় তার ম্যানেজার, স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন বসা ছিলেন সেখানে। মিতুল জাপানিজ ভাষার কিছু না জানলেও মালিক তার সাথে অল্প অল্প ইংরেজিতে কথা বলেন। তার কথা এবং কথা বলার স্মার্টনেস দেখে মালিক মনে মনে বেশ খুশি হন। মালিক মনে করেন তার ফ্যাক্টরিতে কাজ করার পাশাপাশি তাকে দিয়ে তার বাসায় বাচ্চাদের ইংরেজি শিখানোর ব্যবস্থা করবেন। এই ভেবে তাকে আলাদা করে কাজ করার জন্য অফিসে নিয়োগ দেয়া হয়। এটা দেখে তার সাথের অন্য যে তিনজন বাংলাদেশি মিতুলকে সেই ফ্যাক্টরিতে নিয়ে মালিকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তারা তার সাথে মনে মনে শুরুর দিন থেকেই কিছুটা হিংসে করতে শুরু করে।
মিতুল কাজের শেষে অফিস কক্ষ থেকে বের হয়ে সেদিন সরাসরি বাসায় চলে যায়। সাথে অন্য বাংলাদেশি যারা সেখানে কাজ করছিল তাদের সাথে দেখা করে কথা বলে আসেনি। আসার সময় মালিকের সাথে তার কি কথা হলো তার কোনো কিছু না বলে আসাতে তারা তিনজন মিলে মিতুলের এমন আচরণে ভালো মন্দ কোনো কিছু না জেনেই রাগান্বিত হয়।
সন্ধ্যার পর সেই তিন জন কাজ শেষে বাসায় ফিরে অফিসে তার সাথে মালিক পক্ষের কি কথা হয়েছে তা জানতে চাইলে সে সুন্দর করে বুঝিয়ে বলে, তার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর সম্ভাবনার বিষয় আলাপ করেছে এবং তাকে ফ্যাক্টরিতে কাজ করতে না দিয়ে অফিসে অফিসিয়াল কাজ এবং তার বাসায় টিউটর হিসেবে মালিকের বাচ্চাদের ইংরেজি পড়ানোর কথা বলেছে।
মিতুলের কথা শুনে ওরা অনেকটা অবাক হয়ে বলল, তোমাকে তো আমরা ডেকে এনে দেখছি ভুলই করলাম।
মিতুল তাদের এমন রাগ করে কথা বলার কারণ জানতে চায়। তারা বলল, তুমি জাপানে নতুন এসেছ অথচ আমাদের বস হয়ে গেলে। আমাদের চেয়ে তোমার বেতন এবং সুবিধাও থাকবে ফ্যাক্টরিতে অনেক বেশি।
মিতুল বুঝতে পারে তারা যে তার সাথে হিংসে করে কথা বলছে। তাই বাধ্য হয়ে প্রশ্ন করে, তোমরা কি তাহলে চাওনা যে আমি তোমাদের এখানে আর কাজ করি?
মিতুলকে ওরা এমন করে কথা বলে যেন নিজেরাই নিজেদের গলায় কাটা আটকে ফেলে। মিতুলের কথার উত্তরে তারা এখন আর না-ও করতে পারছে না, আবার হ্যাঁ-ও বলতে পারছে না। বিষয়টি একটু জটিল হয়ে গেছে তাদের জন্য।
মিতুল সেদিন ঘরে এসে অন্যদের সাথে কাজের বিষয় নিয়ে কথা বলে সবার মন-মানসিকতা বুঝে ফেলে। এসময় সে মনে মনে ভাবে যে, ওরা ওদের মতো করে ভেবেছে। কিন্তু মিতুল তার যোগ্যতা দিয়ে নিজেকে জাপানে একজন জাপানি মালিকের কাছে আলাদা ইমেজে উপস্থাপন করতে পেরেছে। এটাকে কষ্ট করে হলেও ধরে রাখতে হবে তাকে। তাই সে আর তাদের সাথে কোনো ধরনের খারাপ আচরণ করার কথা ভাবে না। উপরন্তু ভাবে, তাকে যে তারা রাস্তা থেকে ধরে এনে একই সাথে থাকার ব্যবস্থাই নয় শুধু কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করে দিয়েছে, এতে সবার প্রতি নীরবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশই করবে বাকি জীবন। তাই প্রতিদিন সে সকালে ফ্যাক্টরিতে যায়, গিয়ে সবার সাথে প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী সারাদিনের কাজ নিয়ে আলোচনা করে। সবার সাথে সকালের শুভেচ্ছা বিনিময় করে মিতুল তার বসের সাথে ঢুকে যায় অফিসে।
দুপুরের আগে সে অফিস থেকে বের হয়ে প্রায়ই মালিক কিংবা মালিকের স্ত্রীর গাড়িতে চড়ে বাইরে যায়। কিন্তু কোথায় যায় সেটা কেউই আর তাকে সাহস করে জিজ্ঞেস করে না। এদিকে মিতুল অফিসে বসে অফিসিয়াল কাজ করে আর ফাঁকে ফাঁকে জাপানি ভাষা শিখতে থাকে। এক সময় প্রতিষ্ঠানের মালিক মিতুলকে ভাষা শেখার একটি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করে দেন। সেখানে তাকে সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস করতে হয়। তাও আবার সন্ধ্যায়। তাই সে নিয়মিত অফিসের কাজ শেষে মালিকের বাসায় বাচ্চাদের ইংরেজি শিখায়। সন্ধ্যায় যায় ভাষা শিখার ইন্সটিটিউটে।
ভিতরে ভিতরে সে মালিকের সাথে ইমিগ্রেশনে গিয়ে তার প্রথম পর্যায়ে কয়েক মাসের জন্য ভিসা এক্সটেনশন করে নেয়। মালিক তার গেরান্টর হয়ে সব কিছুর ব্যবস্থা করে দিলে ইন্সটিটিউটে ভর্তি হবার সুযোগ পায়। এক সময় সে যখন কিছুটা ভাষা রপ্ত করে ফেলে তখন মালিকের বাসায়ই তার থাকার ব্যবস্থা হয়।
এদিকে অন্যদের সাথে থাকলেও মিতুল কোনো ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ অন্যদের সাথে কখনো আর শেয়ার করে না। সে বুঝতে পারে তার রুমমেট সবাই তার থেকে কয়েক বছর আগে জাপানে আসায় তাদের ভাষা যেমন জানা তেমনই নগদ অর্থও জমে আছে নিজেদের কাছে অনেক। সেই টাকার গরমেই হতে পারে এবং জাপানে আগে আসার অহংকারে মিতুলকে কিছুটা হলেও অন্য চোখে দেখে। এতে মিতুল তার নিজের হিসাবপত্র সব কিছু বুঝে নিয়ে ওদের থেকে দ্রুত সরে যায়। তবে বাসা ছেড়ে মালিকের বাসায় থাকলেও মুখে কখনো অন্যদের সাথে সে খারাপ কোনো কথা বলে না।
এভাবে মিতুলের সেখানে কাজ করার মেয়াদ একমাস সময় কেটে গেলে মাস শেষে সে তার প্রথম মাসের বেতন পায়। অন্যদের মতো ব্যাংকে নয়, তার বেতন হয় হলুদ খামে, নগদে। বেতন পাবার পর সে খাম খুলে ভিতর থেকে ইয়েনের বড় অংকের নোটগুলো টেনে বের করে একবার দেখে। দেখে মনে মনে ভাবে, জীবনের প্রথম বেতন এই টাকা সে কি দেশে তার বাবা মা ভাই-বোনদের জন্য পাঠাবে নাকি যারা তাকে এখানে কাজ দিয়েছে তাদের জন্য খরচ করবে। ভাবনার মাঝখানে একবার নোটগুলো গুনে সেটার সাথে বাংলাদেশের টাকায় কনভার্ট করে দেখে কত টাকা আসে। মনে মনে ভাবে, সে বিশাল অংক। মিতুল আবার ভাবে, এই টাকা সে দেশে থাকলে এক বছর চাকরি করেও হাতে পেতো না। তাই মনে মনে খুশি হয়।
টাকা গোনার পর সে দৌড়ে যায় তার সাথে কাজ করা অন্য তিনজন বাংলাদেশির কাছে। গিয়ে সে তাদের বলে, প্রথম মাসে কত বেতন পেয়েছে। এই টাকা আজকে তাদের তিনজনকে নিয়ে খরচ করবে। বলেই আবার বলল, কাজ শেষে সবাই এক সাথে যেন কাছাকাছি কোনো মার্কেটে যায়। বলে সে আবার অফিস কক্ষের ভিতর চলে যায়।
বিকালে কাজের শেষে মালিকের সাথে পরামর্শ করে মিতুল, এরপর অন্যদের নিয়ে সে চলে যায় কাছাকাছি এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। সেখানে গিয়ে জোর করে সবাইকে তাদের পছন্দ মতো শার্ট এবং তাদের চাহিদা অনুযায়ী গিফট কিনে দেয়। এরপর ভালো এক রেস্টুরেন্ট দেখে চারজন ভিতরে গিয়ে বসে। বসার পর যে যেটা খেতে চায় সেটার অর্ডার দেয়। এমন সময় তাদের ফ্যাক্টরির মালিক আর মালিকের স্ত্রী এসে হাজির হন সেখানে। যদিও মিতুল অন্যদের সাথে বিষয়টি আগে বলেনি, তারপরেও এখানে বসার কথা আগেই মালিকের সাথে পরিকল্পনা করা ছিল। কনফার্ম কিছু না বললেও এখানকার কোনো এক রেস্টুরেন্টে বসার কথা বলা ছিল। তাই মালিক এসে রেস্টুরেন্টের বাইরে থেকে তাদের দেখে এই রেস্টুরেন্টে ঢুকে পড়েন।
খাবার অর্ডার দিয়ে মিতুল তার মালিকের সাথে হালকা হার্ড ড্রিংকস নিয়ে চিয়ারস করতে প্রস্তুত হয়। অন্যরা এ সময় তাদের সাথে ড্রিংকস-এ যোগ না দিলেও সবাই নিজেদের মতো করে সাধারণ জুসের অর্ডার দিয়ে নিজেদের মধ্যে কথা বলা শুরু করে। মিতুল তাদের তিনজনের উদ্দেশ্যে শুরুতেই বলল,- আমি আজকে এখানে কাজ করছি এটা তোমাদের বদৌলতে। আজ আমি জীবনের প্রথম বেতন হাতে পেয়েছি এটাও তোমাদের সহযোগিতার কারণে। আমি চাই তোমাদের এ মাসের ঘরের যত খরচ পুরোটাই আমি একা দিতে। যদিও তোমাদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না, তারপরেও আমি নিজের মনকে সান্ত্বনা দিতে কাজটি করতে চাই। তোমরা কেউ এতে আপত্তি করো না। আমি জানি তোমরাও সবাই ভালো বেতন পেয়েছ। তারপরেও এটি আমার মনের আনন্দের জন্য করতে চাইছি। তোমরা আমাকে মনে মনে স্বার্থপর ভাবছো জানি, আমি আসলে স্বার্থপর নই। আমার কাজ করার সুযোগ এবং যোগ্যতা আছে এজন্য আমি তোমাদের থেকে আলাদা কাজ করছি। তোমরা যেভাবে জাপান এসেছ আমি সেভাবে আসিনি। এসে তোমাদের কারণেই আমি এখানে এই মালিকের মতো একজন ভালো মানুষের দেখা পেয়েছি। উনি আমার জন্য প্রথম যে কাজটি করে দিয়েছেন, সেটি হচ্ছে জাপানে বৈধভাবে ভিসা নিয়ে থাকার ব্যবস্থা। এরপর এখানকার একটি ভাষা শিখার ইন্সটিটিউটে গিয়ে পড়ালেখা করার সুযোগ করে দিয়েছেন। এজন্য আমি প্রথমেই তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। তোমরা আমাকে যতোই স্বার্থপর মনে করো না কেনো আমি আসলে তা নই। আমার পরিবার কিন্তু কখনো আমাদের ভাই-বোনদের স্বার্থপর হতে শিখাননি। তাই আমার দ্বারা কখনো স্বার্থপরের মতো কাজ করা হবে না।
খাবার খেতে খেতে মিতুল তাদের প্রথম জানায় এখানে যে সে একটা ভাষা শিক্ষা ইন্সটিটিউটে জাপানি ভাষা শিখছে। পাশাপাশি মালিকের বাসায় তার বাচ্চাদের ইংরেজি শিখায়।
বলার পর মিতুলের এই আনন্দের সংবাদে যেন সকলেই অংশ নেয়। এরপর রাগ-দুঃখ সব ভুলে তারা মিতুলের হাত ধরে বলে, মিতুল, জাপানে তুমি আমাদের গর্ব। আমাদেরই নয় শুধু আমাদের বিশ্বাস আগামীতে তুমি এমন কিছু করতে পারবে এই জাপানে জাপানিদের মধ্যে, যা নিয়ে দেশের মানুষও গর্ব করতে পারবে। আমরা তোমার কাছে সেটাই প্রত্যাশা করি। আমাদের এই মালিক যেন তোমার আচরণে অন্যদের কাছে গর্ব করে বলতে পারেন, বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালো। ভবিষ্যতে এমন কোন কাজ করো না, মালিক বা তার পরিচিতরা যেন কখনো তোমার কারণে দেশ এবং দেশের মানুষদের খারাপ বলেন।
এরপর সেদিন খাবার শেষে সবাই মিলে আনন্দে হৈ চৈ করে যে যার মতো নিজেদের বাসায় চলে যায়। বাসায় গিয়েও যেন তাদের মনে কাজ করে মিতুলের সেই আনন্দের সংবাদ। সেটা নিয়েই বাসায় তারা কথা বলতে থাকে প্রায় গভীর রাত পর্যন্ত।
চলবে-
লেখক: জাপান প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক