সান নিউজ ডেস্ক : বিশ্ববরেণ্য এই চিত্রশিল্পী ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশের চিত্রকরদের মধ্যে তিনি শিল্পগুরু হিসেবে বিবেচিত। তাঁর নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে একটি গ্যালারি রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কেন্দ্রীয় মসজিদ-সংলগ্ন এলাকায় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তাঁর মৃত্যুদিবসে সাধারণত বিভিন্ন স্মরণসভা ও আয়োজন থাকে। তবে এবার করোনাভাইরাসের কারণে শিল্পাচার্যের মৃত্যুবার্ষিকী পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে পালন করা হবে।
দেশের চিত্রশিল্প আন্দোলনের পুরোধা ব্যাক্তিত্ব জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বৃহত্তর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। আঁকার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল ছোটবেলা থেকেই। এসএসসি পাসের পর তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়ে ভর্তি হন কলকাতা আর্টস স্কুল অ্যান্ড কলেজে।
সেখান থেকে স্নাতক পাশ করে ঢাকায় এসে প্রতিষ্ঠা করেন ‘ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাপ্টসে’। পরে চারু ও কারুকলা কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারু ও কারুকলা ইনস্টিটিউট নামে পরিচিত। নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি গ্যালারিও প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তিনি।
জয়নুল আবেদিনের ১৯৪২-৪৩ সালের দুর্ভিক্ষের করুণ ছবি মানুষের হৃদয়কে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়। চিত্রকর্মের মধ্য দিয়ে তিনি তুলে ধরেছেন এ দেশের অনাহারী, অধিকারহারা, বঞ্চিত মানুষের জীবন সংগ্রামের বাস্তবচিত্র। তাঁর আঁকা ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭০ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়ের ছবি আজও হৃদয় স্পর্শ করে।
২০১৬ সালে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের ৩৫-সংখ্যক গ্যালারিটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন চিত্রশালা হিসেবে সজ্জিত করে। ‘দুর্ভিক্ষ’ চিত্রশালার জন্য ১৯৪৩ সালে জয়নুল বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন। তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলো হলো- ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তাঁর ১৯৬৯-এ অঙ্কিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অঙ্কিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম।
তিনি চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের ওপর অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন। অনুমান করা হয়, তাঁর চিত্রকর্মের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত তাঁর শিল্পকর্মের সংখ্যা ৮০৭। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংগ্রহে আরও প্রায় ৫০০ চিত্রকর্ম সংরক্ষিত রয়েছে। আর ময়মনসিংহের সংগ্রহশালায় রক্ষিত চিত্রকর্মের সংখ্যা ৬২।
তিনি ১৯৫৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে বড় খেতাব হেলাল-ই-ইমতিয়াজ, ’৬৮ সালে ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রদের পক্ষ থেকে ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি এবং ’৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘জাতীয় অধ্যাপক’-এর সম্মান লাভ করেন।
সান নিউজ/এম