আহমেদ রাজু
প্রাচীন মিশরের ফারাওরা মৃতদেহ সংরক্ষণ করতে পাথরের কফিন বানাতো। এই কফিনকে বলা হতো সারকোফাগাস।
ফারাওদের ধর্মীয় বিশ্বাস ছিলো—মৃত্যুর পর তাদের আত্মা বেঁচে থাকার জন্য শরীরের প্রয়োজন। তাই মৃত্যুর পরও যেন তাদের দেহ অক্ষত থাকে, সে জন্য তারা পাথরের কফিনে মৃতদেহকে সংরক্ষণ করতো।
তাদের ধারণা ছিলো—দেহকে সংরক্ষণ করে রাখাই হচ্ছে, পরবর্তী জীবনে যাবার একমাত্র পথ। সারকোফাগাসকে মিশরীয়রা বলতো জীবনের প্রভু।
সারকোফাগাস থাকতো ভাস্কর্য কিংবা শিলালিপি দিয়ে সজ্জিত। প্রাচীন মিশর, রোম ও গ্রিক সভ্যতায় এর চল ছিলো।
মিশরীয় সাম্রাজ্যের তৃতীয় রাজবংশ থেকে সারকোফাগাসে মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখা শুরু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ২৬৮৬ থেকে ২৬১৩ সালের মধ্যে শুরু হয় পাথরের কফিন।
সারকোফাগাস গ্রিক শব্দ। শব্দটির বহুবচন সারকোফাগি বা সারকোফাগাসেস। সারক্স ও ফাগেইন—শব্দ দুটি মিলে তৈরি হয় সারকোফাগাস। সারক্স অর্থ মাংস ও ফাগেইন অর্থ খাওয়া। সারকোফাগাস মানে মাংস খাওয়ার পাথর। এই পাথরে দেয়া হতো বিশেষ এক ধরনের রাসায়নিক। সেটি মৃতদেহের মাংস দ্রুত ক্ষয় করে ফেলতো।
ফারাও আঁখহোরের সারকোফাগাস। আঁখহোর ছিলেন প্রাচীন মিশর সাম্রাজ্যের দ্বাবিংশ বংশের ফারাও। তার বংশ খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৪ থেকে ৩৩২ পর্যন্ত মিশর শাসন করেন।
থুতমোসি-৩ এর সারকোফাগাস। থুতমোসি-৩ ছিলেন অষ্টাদশ রাজবংশের ষষ্ঠ ফারাও। খ্রিস্টপূর্ব ১৪৭৯ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ১৪২৫ সালের ১১ মার্চ পর্যন্ত ৫৪ বছর তিনি মিশর শাসন করেন। তার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ১৪৮১ সালে এবং মারা যান খ্রিস্টপূর্ব ১৪২৫ সালে।
একটি মিশরীয় বালকের সারকোফাগাস
প্রাচীন মিশরীয়দের চাঁদের দেবতা খোনসুরের সারকোফাগাস। তার নামের অর্থ—পর্যটক। তিনি সারারাত আকাশে উড়ে বেড়ান। তার বাবা মুট ও মা আমুন। খোনসুর যখন আকাশে উড়ে বেড়ান, তখন প্রবাহিত হয় মিষ্টি বাতাস। কোনো বাড়িতে শিশুর জন্ম হলে খোনসুর শিশুটির বিছানার পাশে বসে থাকেন।
মিশরীয় এক নারীর সারকোফাগাস
হেনুতমেহিট ছিলেন প্রাচীন মিশরের এক ধনী পুরোহিত। তার জন্ম থেবানে। ১২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে ঊনবিংশ রাজবংশের শাসনামলে তিনি বাস করতেন। তার ভেতরের কফিনটি সোনা দিয়ে তৈরি। তার কফিনটি খুব উঁচু মানের। কফিনের ভেতরে বিপুল সোনা প্রমাণ করে তিনি ছিলেন ধনী মহিলা। তার কফিনটি সংরক্ষিত আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে।
হেনুতমেহিটের কফিনের বহির্ভাগ।
মাতকারের সারকোফাগাস। মাতকারে ছিলেন প্রাচীন মিশরের এক উচ্চ পর্যায়ের নারী পুরোহিত। তার স্বামী মিশরীয়দের দেবতা আমুন। মিশরীয় সাম্রাজ্যের একবিংশ রাজবংশের সময়ে তিনি বাস করতেন।
অষ্টাদশ রাজবংশের শেষ ফারাও তুতেনখামেনের সারকোফাগাস। তার জন্ম খ্রিস্টপূর্ব ১৩৪২ সালে। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৩৪ থেকে ১৩২৫ পর্যন্ত তিনি মিশর শাসন করেন। তার বাবা ফারাও আখিনাতেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি মারা যান। তার দুটি কন্যা সন্তানের মধ্যে প্রথমটি গর্ভধারণের পাঁচ মাসের মধ্যে ভূমিষ্ট হয়ে মারা যায় এবং দ্বিতীয়টি পূর্ণকালীন গর্ভধারণের পর ভূমিষ্ট হয়ে মারা যান।
মিশরীয় সাম্রাজ্যের ত্রিশতম রাজবংশের ফারাও ডিজেহর সারকোফাগাস। খ্রিস্টপূর্ব ৩৮০ থেকে ৩৪৩ পর্যন্ত তিনি ফারাও ছিলেন।
তুজার সারকোফাগাস। তুজা ছিলেন একজন মিশরীয় রাজবংশীয় নারী এবং রাণি তিয়েরের মা। ফারাও আখিনাতেনের দাদি এবং তুতেনখামেনের প্রমাতামহ। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৭৫ সালে তিনি মারা যান।
ইউয়ার সারকেফাগাস। খ্রিস্টপূর্ব ১৩৯০ সালের দিকে ইউয়া অষ্টাদশ মিশরীয় রাজবংশে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম তুজা। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। তাদের কন্যা তিয়ে ছিলেন নবম ফারাও আমেনহোতেফ-৩ এর মহারাণি।
হেরিবসেনেসের সারকোফাগাস। তিনি ছিলেন এক বিখ্যাত নারী পুরোহিত। খ্রিস্টপূর্ব ৬৬৪ থেকে ৫২৫ সালের দিকে ষষ্ঠবিংশ রাজবংশের রাজত্বকালে তিনি বাস করতেন। তার জন্মও হয়েছিলো এক পুরোহিত পরিবারে।
সাননিউজ/এএসএম