হাসনাত শাহীন: অমর একুশে বইমেলার প্রাণ বই। আর এই বইয়ের কারিগর বিভিন্ন ধারার প্রকাশকরা। যাদের বই নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় আপামর মানুষের প্রাণের মেলা বইমেলা। সেই প্রকাশকদের সঙ্গে কোনো ধরণের আলোচনা না করে হঠাৎ বইমেলা বন্ধের সময় সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত বেঁধে দিয়েছে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি।
এর প্রেক্ষিতে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠেছে মেলায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন ধারার প্রকাশকরা এবং তাদের দুই সমিতি ‘বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি’।
প্রকাশকরা বলছে- চৈত্রমাসের প্রখর রোদের তাপ এবং করোনাকালীন নানান বিষয় মাথায় রেখে বইপ্রেমীরা মেলায় আসে বিকেল ৪টার পরে। আর মেলা জমে ওঠে বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার মধ্যে; যা অব্যাহত থাকে রাত ৮টা পর্যন্ত। অর্থ্যাৎ ঠিক যে সময়ে মেলা জমে ওঠে সেই সময়ে এখন মেলা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে! এর ফলে প্রকাশকরা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং প্রকাশনাশিল্প হুমকির মুখে পড়বে।
সুতরাং মেলার আয়োজক কতৃপক্ষের কাছে আমরা আমাদের এই প্রকাশনাশিল্পের বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক মেলা তিনটায় শুরু করে সাড়ে ছয়টায় বন্ধ না করে শুরুর সময় একঘন্টা পিছিয়ে দিয়ে ৪ টায় শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত মেলা চালু রাখার দাবি জানায়।
প্রকাশকদের এই এমন আর্তির মুখে বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাত করেছে প্রকাশকদের দুই সমিতি- ‘বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি’। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে প্রকাশকদের দুই সমিতি গণমাধ্যমকে জানান, ‘আমরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। এবং মেলা তিনটায় শুরু করে সাড়ে ছয়টায় বন্ধ না করে শুরুর সময় একঘন্টা পিছিয়ে দিয়ে চারটায় শুরু করে রাত আটটা পর্যন্ত মেলা চালু রাখার পক্ষে আমাদের দাবি তুলে ধরেছি। তিনি আমাদেরকে আশ্বাস্ত করেছেন। এবং বলেছেন- আমি আজ ( ১এপ্রিল, বৃহস্পতিবার) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবো। আপনাদের প্রস্তাবনা তুলে ধরবো। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই মোতাবেক আমরা মেলার সময়সূচির বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নিবো।
এবিষয়ে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, বিকেল তিনটায় মেলায় কোন মানুষ আসে না। এসময়টাতে প্রায় প্রতিটি স্টল ও প্যাভিলিয়নের লোকজন অলস সময় কাটায়। ৫টায় অফিস-আদালত বন্ধ হওয়ার পর ৬টার দিকে মেলা জমে উঠে। কিন্তু বাংলা একাডেমি সাড়ে ৬টায় মেলা বন্ধের সময় বেঁধে দিয়েছে এবং বন্ধ হওয়ার আধঘন্টা আগে ৬টায় লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। যেই সময়টাতে মেলা জমে উঠবে সেই সময়টাতে যদি বন্ধই করে দেওয়া হয় তাহলে মেলা আয়োজন করে লাভ কি?
বাংলা একাডেমির এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা চালু করার প্রস্তাব বাংলা একাডেমিকে দিয়েছি। তারা বলেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে তাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত আমাদের জানাবেন। অতএব সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আমাদের সামনে আর বিকল্প কোন পথ নেই।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে মেলায় এসেছিলেন সংস্কৃতিসচিব বদরুল আরেফীন। তিনি মেলা প্রাঙ্গণ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, এবারের মেলা খুবই গোছানো একটি মেলা। দেখলাম সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে বই কিনছে। সবার মুখেই মাস্ক দেখলাম ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও দেখেছি। এটা খুবই ভালো যে, মানুষ স্বাস্থ্যসচেতন হয়ে মেলায় আসছে এবং বই কিনছে। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রকাশকদের প্রস্তাবিত সময়সূচিটি সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানানো হবে এবং পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান সংস্কৃতিসচিব।
মেলার নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, গতকাল বৃহস্পতিবার মেলার ১৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭২টি। এর মধ্যে গল্পের বই রয়েছে ১৫টি, উপন্যাস ১০টি, প্রবন্ধ ৬টি, কবিতা ২২টি, শিশুসাহিত্য ১টি, জীবনী ২টি, মুক্তিযুদ্ধ ১টি, বিজ্ঞান ১টি, ইতিহাস ৩টি, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক ৪টি, রম্য/ধাঁধার ১টি, অনুবাদ ১টি এবং অন্যান্য ৪টি।
আগামীকাল শুক্রবার (২ এপ্রিল) ছুটির দিনের মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় আর চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত।
সান নিউজ/এইচ এস/আরআই