হাসনাত শাহীন: কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিই বইপ্রেমীদের আটকে রাখতে পারে না। দেশব্যাপি হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল থাকলেও চলমান অমর একুশের বইমেলায় ছিলো বইপ্রেমীদের স্বতস্ফূর্ত বিচরণ।
রাজধানীর রাজপথে হরতাল কার্যকর করতে হেফাজতে ইসলাম নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করলেও তা কোনোভাবেই দমিয়ে রাখতে পারেনি বইপ্রেমীদের।
মহানগরীজুড়ে যানবাহন তুলনামূলক কম চলাচল করলেও নানা মাধ্যমের যানবাহনে চেপে বইপ্রেমীরা ঠিকই বইয়ের টানে চলে এসেছে প্রাণের বইমেলায়। নানা বাধা, শঙ্কা, উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠাকে উপেক্ষা করে রোববার (২৮ মার্চ) হরতালের দিনে বইপ্রেমীরা মেলায় ছুটে এসেছেন এবং নিজের প্রিয় বইটি কিনেই বাড়ি ফিরেছেন।
এ নিয়ে মেলার বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এবং মেলায় অগতরা বলছেন, একদিকে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিবেশ অন্যদিকে মহামারি করোনার চোখ রাঙানি, এত কিছুর পরেও রোববার ইমেলার একাদশ দিনে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে দর্শনার্থী আর বইপ্রেমীরা ছুটে এসেছেন আর বই কিনেছেন চলমান পরিস্থিতিতে নিঃসন্দেহে এটা এক অকল্পনীয় বিষয়। বইয়ের প্রতি হৃদয়ের টান না থাকলে অস্থির এই সময়ে তা কখনো সম্ভব হতো না।
হরতালে কারণে মেলায় লোকজন তেমন আসবে না এবং বই বিক্রিও তেমন একটা হবে না এমন শঙ্কা ছিল বেশিরভাগ প্রকাশকের। তাদের সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছে- উৎসবপ্রিয় ও বইপ্রিয় বাঙালি। এবং তা আবারও প্রমাণ হয়েছে মেলার একাদশ দিনের জনসমাগম ও বই কেনার দৃশ্যের মাধ্যমে।
ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ভেবেছিলাম হরতালের কারণে মেলা জমবে না। লোকজন আসবেনা। বিক্রি তেমন একটা হবে না। কিন্তু আমার ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে বইপ্রেমীরা। সকল বাধা ও প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে মেলায় লোকজন এসেছে আর বইও কিনেছে। তবে, শুক্র ও শনিবারের চেয়ে রবিবার বিক্রি একটু কম হবে আর লোকজনও কম আসবে এটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাতে মেলাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি আশা করছি সামনের দিনগুলোতেও মেলায় কোনো খারাপ প্রভাব পড়বেনা।
রাজধানীর শ্যামলী থেকে মেলায় এসেছিলেন আকাশ আহমেদ। তিনি হরতালের দিনে মেলায় আসার বিষয়ে বলেন, ভেবেছিলাম হরতালের কারণে মেলায় হয়তো মানুষজন কম আসবে। ভিড় কম থাকবে। কম ভিড়ে বই কেনার মজাই আলাদা। কিন্তু এসে দেখি উল্টো চিত্র। আমার মতো অনেকেই ছুটে এসেছে বইমেলায়। শহরে হরতালের কারণে একটু থমথমে অবস্থা আর মেলায় একেবারেই ভিন্নরূপ। দেশে যে হরতাল চলছে এর ছিঁটেফোটাও মেলায় বোঝা যাচ্ছেনা। মেলার বাইরে এক রূপ আর ভেতরে এক রূপ। খুবই ভালো লাগছে মেলায় এসে। একদিনে সব বই কেনা সম্ভব হবেনা। আরেকদিন এসে সব বই কিনবো। তিনি আরও বলেন, অন্যদের কথা বলতে পারবো না, তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবারের বইমেলা নিয়ে ভীষণ আশাবাদি।
মেলার নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, রোববার (২৮মার্চ) মেলার একাদশ দিনে নতুন বই এসেছে- ১২২টি। এর মধ্যে গল্প-১৮, উপন্যাস-২০, প্রবন্ধ-৭, কবিতা-৪৪, ছড়া-২, শিশুসাহিত্য-১, জীবনী-৪, রচনাবলি-১, মুক্তিযুদ্ধ-২, নাটক-২, ইতিহাস-৩, রাজনীতি-১, বঙ্গবন্ধু বিষয়ক বই-৩, রম্য/ধাঁধা-১, ধর্মীয়-২, অনুবাদ-১ এবং অন্যান্য বই এসেছে- ১০টি। আর গত ১১ দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে মোট ১হাজার ৩শত ৮১টি।
এসব নতুন বইয়ের মধ্যে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স এনেছে- স্বকৃত নোমানের উপন্যাস ‘উজানবাঁশি’, আগামী প্রকাশনী থেকে হাসনাত আবদুল হাইয়ের উপন্যাস ‘কিংবদন্তির ত্রয়ী’, কথাপ্রকাশ থেকে মুস্তাফিজ শফি সম্পাদিত রাজনৈতিক নিবন্ধ ‘বহুমাত্রিক বঙ্গবন্ধু’, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর প্রবন্ধগ্রন্থ ‘বর্তমানে দাঁড়িয়ে ভবিষ্যতের মুখোমুখি’, আর্ক পাবলিশিং এনেছে গাজী কবিরের কাব্যগ্রন্থ ‘ধ্রুপদী’, অবসর প্রকাশনা সংস্থা থেকে গোলাম সরোয়ারের ‘রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন, শিক্ষা, সমাজদর্শন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা’, সরলরেখা প্রকাশনা থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর কাব্যগ্রন্থ ‘যাত্রাপুস্তক’ এবং বিভাস প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে প্রেমের কবি মহাদেব সাহা’র নতুন কাব্যগ্রন্থ ‘পৃথিবী, তোমার দুঃখ ঘুচে যাবে’ উল্লেখযোগ্য।
সান নিউজ/এইচএস/আরআই