হাসনাত শাহীন: শুক্রবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটির দিন। অমর একুশে বইমেলার নবম দিন। করোনার চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে এমন দিনে দলে দলে বইপ্রেমীরা মেলা প্রাঙ্গণে ছুটে আসবে।
এমন দিনের অপেক্ষায় গত কয়েকদিন যাবত বসে আছেন লেখক ও প্রকাশকরা। স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অমর একুশে বইমেলাকে সফলতার পথে আরো একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এমন আশা প্রকাশ করছেন বেশিরভাগ প্রকাশক।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) সপ্তাহের শেষ কর্ম দিবসেও মেলা প্রাঙ্গণ ছিল জমজমাট। এদিনের মেলায় এসেছেন সবশ্রেণীর পাঠকরা। মেলা প্রাঙ্গণে ঘোরাঘুরি, ছবি তোলার পাশাপাশি বই কিনে নিতেও ভোলেননি বইপ্রেমীরা।
পারিজাত প্রকাশনীর কর্ণধার শওকত হোসেন লিটু বলেন, স্বাধীনতা দিবসের অপেক্ষায় আছি আমরা। আশা করছি মেলা নতুনরূপে সফলতার পথে এগিয়ে যাবে। করোনাকালের মেলা কেমন হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে এই প্রকাশক বলেন, যা ভেবেছিলাম তা হয়নি। আমাদের শংকা কেটে গেছে। লোকজন আসছে আর পছন্দের বইটি কিনছে। অন্যবারের চেয়ে এবারের মেলা কোনভাবেই মন্দ নয়।
এদিন মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৭টি, গত আট দিনে মোট বই প্রকাশ হয়েছে ৮০৮টি। শুক্রবার স্বাধীনতা দিবস ও ছুটির দিনের মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় আর শেষ হবে যথারীতি রাত ৯টায়। এর আগে সকাল ৮টায় স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানস্থ শিখা চিরন্তনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে বাংলা একাডেমি।
মেলার নতুন বই
বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপবিভাগের তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার মেলায় নতুন বই এসেছে ১১৭টি। এর মধ্যে অন্যপ্রকাশ এনেছে সেলিনা হোসেনের বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থ 'নির্বাচিত গল্পে বঙ্গবন্ধু', পাঞ্জেরি পাবলিকেশন্স থেকে মিনার মনসুরের ছড়াগ্রন্থ 'চিরকালের নেতা', ঐতিহ্য থেকে সৈয়দ শামসুল হকের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থ 'একাত্তরের বিজয় গাথা', শোভা প্রকাশ থেকে সনজীদা খাতুনের 'বড় বিস্ময় লাগে হেরি তোমারে', চিরদিন প্রকাশনী থেকে নির্মলেন্দু গুণের কাব্যগ্রন্থ 'ওড টু এ লিডার' উল্লেখযোগ্য।
মেলার মূলঞ্চের আয়োজন
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের গণহত্যা ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বদেশ রায়। আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির, আহম্মেদ শরীফ এবং চৌধুরী শহীদ কাদের।সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার চরিত্র বিচার করলে দেখা যায় উদ্দেশ্য ও সংখ্যা দুটোর বিচারেই বাংলাদেশের গণহত্যা অনেক বড়। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি শাসকদের উদ্দেশ্যই ছিল, একটি নরগোষ্ঠী ও তারা যে স্বাধীনতার চেতনায় এক হয়েছে, এই দুটোকেই ধ্বংস করা। হত্যাকারীদের প্রতি পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশনা ছিল, প্রথমে হত্যা করতে হবে আওয়ামী লীগ নেতাদের, এরপরে ছাত্রসহ আওয়ামী লীগের কর্মীদের সঙ্গে বাঙালিদের চেতনার বাতিঘর বুদ্ধিজীবীদের। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চের রাত থেকেই সেটা শুরু করেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের গণহত্যায় বুদ্ধিবৃত্তিক পেশাজীবীদের ওই হত্যাকাণ্ডের পরে আর যে হত্যা ও নির্যাতন ঘটে, তা হলো হিন্দুধর্মাবলম্বীদের হত্যা ও তাদের দেশত্যাগ বাধ্য করা। বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ার জন্য পশ্চিমা বিশ্বের ভুল দৃষ্টিভঙ্গি যেমন কাজ করছে, তেমনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশও একটি বড় বিষয়।
তারা আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাঙালিদের ওপর মানব ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম ও বর্বরোচিত গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের যে ভাষ্য তৈরি করা হয় সেখানে গণহত্যার বিষয়টি উপেক্ষিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ইতিহাস যেমন প্রয়োজন, তেমনি গণহত্যার ইতিহাসকেও সামনে তুলে ধরতে হবে। ১৯৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য জাতীয় ঐকমত্য একান্ত জরুরি। সেই সঙ্গে, গণহত্যা বিষয়ে নিবিড় বিদ্যায়তনিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক মাধ্যমে সেসব গবেষণার ফল তুলে ধরতে হবে এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার আয়োজন করে গণহত্যার প্রকৃত চিত্র বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচন করতে হবে।
সান নিউজ/আরআই