হাসনাত শাহীন, বইমেলা থেকে: অমর একুশে বইমেলায় লিটল ম্যাগাজিন চত্বর আগের জায়গায় পুনঃস্থাপনের দাবিতে ও বাংলা একাডেমির বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে লিটলম্যাগ সম্পাদক-কর্মীরা প্রতিবাদ সমাবেশ ও বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিবাদি মৌনমিছিল করেছে।
রোববার (২১ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক ও কর্মীরা সম্মিলিতভাবে এই প্রতিবাদ সমাবেশ ও মৌনমিছিল করেছে।
এ প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন করাতকল সম্পাদক কবি শাফি সমুদ্র, দ্রষ্টব্য সম্পাদক কামরুল হুদা পথিক, লোক সম্পাদক- অনিকেত শামীম, শালুক সম্পাদক কবি ওবায়েদ আকাশ, হালখাতা সম্পাদক শওকত হোসেন, দৃষ্টি সম্পাদক কবি বীরেন মুখার্জী, ঘুংঘুর নির্বাহী সম্পাদক খালেদ চৌধুরী, মেঘ সম্পাদক শাহীন লতিফ, বুনন সম্পাদক খালেদ উদ-দিন সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লিটলম্যাগ সম্পাদক, লেখক ও কর্মীরা।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শিল্প সাহিত্য ও চিন্তার বাঁকবদলের বাতিঘর, প্রচলিত ধ্যানধারণার বিপরীতে নতুন নতুন সৃজনের আশ্রয়গৃহ ‘লিটল ম্যাগাজিন’। প্রতিবছর বইমেলা উপলক্ষে বিক্রয় ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। এজন্য একাডেমি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি নির্দিষ্ট জায়গাও বরাদ্দ নেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিবছর এই জায়গা বরাদ্দ নিয়ে একাডেমি কর্তৃপক্ষ নানা টালবাহানা করে এবং প্রতিবারই শেষ পর্যন্ত একাডেমির মহাপরিচালক এবং লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে তবেই সমাধানে আসতে হয়।
তারা বলেন, আমাদের আন্দোলনের মুখে বাংলা একাডেমি গত বছরও লিটল ম্যাগাজিন চত্বরটি বহেড়াতলা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মূলমেলার সঙ্গে যুক্ত করে। এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের উন্মুক্ত মঞ্চের পার্শ্ববর্তী স্থানে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর করা হয়। তখন একাডেমি ও সম্পাদকদের মধ্যে এই জায়গাটিই স্থায়ী চত্বর হিসেবে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারপরও যদি কোনো কারণে কোনো পরিবর্তন-পরিমার্যনের প্রসঙ্গ আসে, তাহলে অবশ্যই সম্পাদকদের সঙ্গে একাডেমি কথা বলে যৌথমতের ভিত্তিতে সেটা করবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।
কিন্তু এ বছর একাডেমি কর্তৃপক্ষ কোনো সম্পাদক-কর্মীর সঙ্গে কথা না বলেই লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তর করে একটি বিচ্ছিন্ন জায়গায় স্থাপন করে এবং মূল মেলার দিকে পিছন দিয়ে একটি খুপড়ি ঘরের মতো করে লিটল ম্যাগাজনি স্টলগুলো স্থাপন করে।
করোনার কারণে ব্যাপক দূরত্ব রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্যান্য স্টল নির্মাণ করা হলেও লিটল ম্যাগাজিন চত্বরে দুই স্টলের মাঝে এক ইঞ্চি জায়গাও ফাঁক রাখা হয়নি। বরং মেলার জন্য প্রায় ব্যাপক এলাকা ব্যবহার করা হলেও এই চত্বরের জায়গা পূর্বের চেয়ে ছোট করা হয়েছে। যা বাংলা একাডেমির নিকৃষ্টতম ও বর্বর মানসিকতার পরিচায়ক।লিটলম্যাগ সম্পাদকরা মনে করেন, এটা লিটল ম্যাগাজিন তথা তারুণ্য-প্রধান লেখকদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার জন্যই একটি প্রতিক্রিয়াশীল সিদ্ধান্ত।
একাডেমির হটকারী এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং চত্বর আগের জায়গায় পুনঃস্থাপনের দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছোটকাগজ সম্পাদকরা ২১ মার্চ থেকে শুরু করে দাবি না মানা পর্যন্ত সকল ছোটকাগজ স্টল বন্ধ রাখার ঘোষণা বাস্তবায়ন করে আসছে। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত লিটলম্যাগের সকল স্টল বন্ধ থাকবে বলে জানানো হয়। এবং সেই সঙ্গে তারা বইমেলা প্রাঙ্গণে প্রতিদিন মানবন্ধন ও মেলাচত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করারও ঘোষণা দিয়েছে। আগামীকাল বিকেল ৪টায়ও প্রতিবাদী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে- লিটলম্যাগ সম্পাদক ও কর্মীরা।
এদিকে, এ বিষয়ে বাংলা একাডেমি কতৃপক্ষ বলছে- আমরা আজ রাতেই ( রোববার, ২১ মার্চ) লিটল ম্যাগাজিনের স্টল গতবারের জায়গায় স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কিন্তু, লিটলম্যাগ সম্পাদক ও কর্মীরা বাংলা একাডেমির এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। এবং তারা বলছে, বাংলা একাডেমি এবং লিটলম্যাগের দায়িত্ব থাকা একাডেমির কর্মকর্তা কবি ও গবেষক আমিনুর রহমান সুলতান আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে কোন কিছু জানাননি। সুতরাং আমরা কিভাবে বিশ্বাস করবো তারা আমাদের আগের জায়গায় স্থানান্তর করবে।
সান নিউজ/এইচএস/এসএস