সান নিউজ ডেস্ক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তি অর্জনের সংগ্রামে ও এ দেশের সব সংকটে তরুণরাই সবচেয়ে অগ্রগণ্য। এ কারণে স্বাধীনতা অর্জনের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে জাতির পিতা তরুণ ও যুবসমাজকে উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলায় নজর দিয়েছিলেন।
তরুণরা যুগে যুগে 'তারুণ্যের আলোকশিখা' হয়ে যে কোনও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অনন্য ভূমিকা রেখেছেন।
জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলমান ১০ দিনের অনুষ্ঠানমালার চতুর্থ দিনের থিমও ছিল 'তারুণ্যের আলোকশিখা'। এই থিম নিয়েই শনিবার সেখানে বর্ণাঢ্য আয়োজনে প্রামাণ্যচিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। স্মরণ করা হয় স্বাধীনতা ও মুক্তিসংগ্রামের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে।
গত বুধবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উদ্বোধন করা হয় ১০ দিনের এই মনোমুগ্ধকর আয়োজনের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলবে অনুষ্ঠানমালা।
যেখানে 'মুজিব চিরন্তন' প্রতিপাদ্যে প্রতিদিন পৃথক থিমভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অডিও ভিজ্যুয়াল এবং অন্যান্য বিশেষ পরিবেশনার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হচ্ছে।
চতুর্থ দিনের আয়োজনে বিকেল সোয়া ৫টায় 'মুজিব চিরন্তন' প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল এ্যানিমেশন ভিডিও পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর আবহ সংগীত পরিবেশিত হয়। আলোচনা পর্বে স্বাগত সম্ভাষণ প্রদান ছাড়াও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
তিনি বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য ও অবহেলার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামের অগ্রভাগে ছিলেন তরুণ ও যুবসমাজ। ভাষার অধিকার এবং স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা অর্জনের দীর্ঘ সংগ্রামে তরুণরাই অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। দেশ গঠনের সংগ্রামেও তাদের এই ভূমিকা ছিল অনবদ্য।
পরে 'তারুণ্যের আলোকশিখা' থিমের ওপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। যেখানে ১৯৪৭ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায় নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়।
থিমভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে এসে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল জাতির এই মুক্তিসংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও মুক্তির সংগ্রামে এ দেশের তরুণ ও যুবসমাজ অগ্রভাগে ছিল।
আলোচনা অনুষ্ঠানে ওআইসির সেক্রেটারি জেনারেল ড. ইউসুফ আল ওথাইমিন এবং ফ্রান্সের সিনেটর ও ইন্টার পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপ ফর সাউথইস্ট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট জেকোলিন ডেরোমেডির ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়।
এরপর আধাঘণ্টার বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে পরিবেশন করা হয় বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এতে জাপানের শিল্পীদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এ সময় জাপানি শিল্পীদের মুখে বাংলা সংগীত 'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা' পরিবেশন এবং বাংলায় দেওয়া বক্তব্য সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
দর্শকসারিতে বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা হাততালি দিয়ে ও সহাস্যে তাদের অভিবাদন জানান।
পঞ্চম দিনের অনুষ্ঠানে সমসাময়িক শিল্পীদের পরিবেশনায় বঙ্গবন্ধুর পছন্দের গানও ছিল আরেকটি আকর্ষণীয় পরিবেশনা। পরে থিমেটিক কোরিওগ্রাফি এবং দুই প্রজন্মের শিল্পীদের মেলবন্ধনে মিশ্র মিউজিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রাত ৮টায় অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। এই বর্ণাঢ্য আয়োজন সব টেলিভিশন ও বেতার, অনলাইন মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
রোববার ( ২১ মার্চ ) পঞ্চম দিনের থিম 'ধ্বংসস্তূপে জীবনের গান' :'মুজিব চিরন্তন' প্রতিপাদ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানমালা। সূচি অনুযায়ী প্রথম পর্বে বিকেল সোয়া ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠান এবং আধাঘণ্টার বিরতি দিয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান ও সঞ্চালনা করবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। থিমভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আলোচনা পর্বে জর্ডানের বাদশার পক্ষে দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভিডিওবার্তা প্রচার করা হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বন্ধুরাষ্ট্র চীনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, 'মুজিব চিরন্তন' প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল এ্যানিমেশন ভিডিও, ক্যানভাসে বঙ্গবন্ধুর সাড়ে ৩ বছর :শূন্য থেকে মহাশূন্যে (কাব্য, সুর ও ছন্দে কোরিওগ্রাফি), বঙ্গবন্ধুর নবজীবনের ডাক :ধূসর বাংলা থেকে সবুজ বাংলা (পালা, জারি ও গম্ভীরা পরিবেশনা), বিশ্বনেতা ও বিশ্ব নাগরিকের সঙ্গে মেলবন্ধন (মিউজিক কোরিওগ্রাফি) পরিবেশ করা হবে।
এ ছাড়া নারী জাগরণ ও নারীর ক্ষমতায়নে বঙ্গবন্ধু (থিয়েট্রিক্যাল কোরিওগ্রাফি), শিশু বিকাশে বঙ্গবন্ধু :আলো আমার আলো (১০০ শিশু শিল্পীর পরিবেশনা), শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে নবজাগরণ : শিল্পের সকল বাহনের উৎকর্ষ সাধন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নাটক : ২৮৮ দিন এবং আন্তর্জাতিক সংগীত ধারার সঙ্গে সমন্বয় রেখে ব্যান্ড সংগীতের জাগরণ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।
সান নিউজ/এসএ