হাসনাত শাহীন, বইমেলা থেকে : করোনার কারণে এবারের অমর একুশে বইমেলা হবে কি হবে না তা নিয়ে গত ডিসেম্বর থেকেই আলোচনায় মুখর ছিল লেখক-পাঠক, প্রকাশকসহ বইপ্রেমি বিভিন্ন মহল। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছিলেন সবাই।
তবে, সব কিছু ছাপিয়ে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে স্বাধীনতার মাস মার্চের ১৮ তারিখ থেকে শুরু হয়েছে বইপ্রিয় বাঙালির প্রাণের মেলা অমর একুশে বইমেলা। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৪ এপ্রিল শেষ হবে এবারের এ মাসব্যাপি ‘অমর একুশে বইমেলা ২০২১’।
দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুরু হওয়া প্রাণের এ মেলার আজ দ্বিতীয় দিন। মেলার এ দ্বিতীয় দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৯ মার্চ) হওয়াতে বেলা ১১টায় সবার জন্য খুলে যায় প্রবেশ পথ। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলায় প্রবেশ করেন বইপ্রেমী আবাল-বৃদ্ধ বনিতারা।
মেলার প্রবেশদ্বার খুলে দেয়ার সময় থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেল- এখনও পুরোপুরি গুছিয়ে না ওঠা স্টল বা প্যাভেলিয়ন নিজেদের সাধ্য মতো সাজিয়ে বসেছে বইয়ের পসরা।
কথা হয় প্রকাশনা সংস্থা বর্ণমালা’র সত্ত্বাধিকারী মামুন অর রশিদের সঙ্গে। তিনি সান নিউজকে বলেন, এবার মেলায় ‘বর্ণমালা’র প্রথম স্টল পেয়েছে। মেলার কমিটির নিয়ম অনুসারে ১৬ মার্চের মধ্যেই আমরা স্টল গুছিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এখনও অনেক স্টলে-প্যাভিলিয়নে কাজ চলছে। এটা স্বাভাবিক। কারণ, এবার মেলা কেমন হবে সেটি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকাতেই সবারই কাজ গুছিয়ে উঠতে একটু সময় লাগছে। তবে, আজ-কালের মধ্যেই মেলার তার পরিপূর্ণ চেহারা পাবে বলে আশা করছি।
আজ শুক্রবার, মেলা শুরু হয় ১১টায় থেকে। মেলায় কেমন লোকজন আসছে, কোনো বই বিক্রি হয়েছে কি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো বারই মেলার প্রথম দিকে তেমন ভিড় হয় না। বেচা-বিক্রিও তেমন হয় না। আজ ছুটির দিন অনুযায়ী মেলায় আগত লোক সংখ্যা অনেক কম, এখন পর্যন্ত বই বিক্রি হয়নি। তবে, বিকেলের দিকে হয়তো লোকসমাগম একটু বাড়বে, বেচা-বিক্রিও হবে।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, মিজান পাবলিশার্স, নালন্দা, অন্যপ্রকাশ, জার্নিম্যান বুকস, পাঞ্জেরি, পার্লসহ বিভিন্ন বড় বড় প্রকাশনীও এখনো পুরোপুরি গুছিয়ে উঠতে পারেনি তাদের প্যাভেলিয়ন। স্টলের ক্ষেত্রেও অবস্থা প্রায় একই। তবে প্রকাশকরা গুছিয়ে উঠতে না পারলেও যে অল্প সংখ্যক পাঠক-দর্শকরা মেলায় এসেছেন, আসছেন তারা প্রায় সকলেই নিজের মতো করে সচ্ছন্দেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন মেলাজুড়ে। তবে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেলা প্রাঙ্গণ প্রায় ফাঁকা ছিল। এর কারণও আছে। আর সেটা হলো- মেলার নীতিমালা অনুযায়ী ছুটির দিনের মেলার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিরতি।
এরই মধ্যে কথা হয় বিপনু চৌধুর নামের এক বইপ্রেমীর সঙ্গে। তিনি সান নিউজকে জানান, দীর্ঘদিন করোনার কারণে কোথাও তেমন বড় কোনো উৎসব নেই। তাই বইমেলা শুরু হওয়ায় এবং আজ ছুটির দিন থাকায় চলে এলাম। যতোটা পারি ঘুরে দেখবো, যদিও মেলা এখনো গুছিয়ে ওঠেনি। তবুও যতটুকু আছে, সেটাও কম নয়।
অন্যবার ছুটির দিনের সকাল বেলা শিশু প্রহর ঘোষণা করা হলেও এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে রাখা হয়নি শিশু প্রহরের আয়োজন। তবে শিশু চত্বরকে সাজানো হয়েছে শিশুদের উপযোগী করেই। আর ছুটির দিনের সকালে সেখানে শিশুদের উপস্থিতিও দেখা গেছে বেশ ভালো।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মামা আর মায়ের সঙ্গে আসা যুবরাজ সান নিউজকে বলেন, এই প্রথম বার বইমেলায় এলাম। অনেক বই কেনার ইচ্ছে আছে। আমার ভূতের বই পছন্দ। কবিতা আর গল্পের বইও কিনবো।
পাঞ্জেরির প্যাভিলিয়নের সামনে কথা হয় প্রকাশনা সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা ইফতেখার আজীজের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ ছুটির দিন; অথচ মেলায় তেমন লোক নেই। বিকেলের দিকে এই লোকসমাগম বাড়তে পারে। সে জন্য আমরা আমাদের প্যাভিলিয়নের বইগুলো ভালো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছি।
এদিকে, মেলার অন্যান্য প্রান্ত ঘুরে দেখা গেল একই চিত্র। কী প্যাভিলিয়ন, কী স্টল- সবখানেই বই সাজানোতে ব্যস্ত কর্মীরা। সবাই প্রত্যাশা করছেন ছুটির দিনের বিকেলে একটু বেশিই লোক সমাগম হবে। সবাই তাই স্ব-স্ব স্টল-প্যাভিলিয়নে সাজিয়ে-গুছিয়ে নিচ্ছেন। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়নের বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, ছুটির দিনের প্রথম প্রহর যেমন অবসর আর আলসেমিতেই কেটেছে, বিকেলে সেই অবস্থা থাকবে না। আর, সন্ধ্যার পরে হয়তো দম ফেলার ফুসরত থাকবে না।
অমর একুশে বইমেলার এবারের সাঁইত্রিশতম আসরের নীতিমালা অনুসারে ছুটির দিন হিসেবে আজ শুক্রবার মেলা চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
সান নিউজ/আরআই