হাসনাত শাহীন: বাংলা ভাষা সাহিত্যের চর্চা, বিকাশ, বাঙালি সংস্কৃতির বহমান উদার-অসাম্প্রদায়িক ধারার অনন্য সংযোজন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’। নানান জল্পনা-কল্পনা শেষে আগামী ১৮ মার্চ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে এবারের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২১’। প্রতিবছরের মতো এবারও আপামর মানুষের এই প্রাণের মেলায় বিভিন্ন ধারার প্রকাশনা সংস্থার পাশাপাশি একটা বিশেষ অংশ জুড়ে থাকছে ‘লিটলম্যাগ চত্বর’।
যেসব লিটলম্যাগ বা ম্যাগাজিন এবারের এই মেলায় স্টল নিতে আগ্রহী তাদের কাছে আবেদন করার আহ্বান জানিয়েছে- মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি। আগামী রোববার (২৮ ফেব্রয়ারি) থেকে শুরু হবে লিটল ম্যাগাজিনের স্টল বরাদ্দের এই আবেদন গ্রহণ। আবেদন গ্রহণ শেষ হবে আগামী ৮ মার্চ।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এবিষয়ে কথা হয় লিটল ম্যাগাজিনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কবি আমিনুর রহমান সুলতানের সঙ্গে। তিনি সান নিউজকে বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’য় লিটলম্যাগ চত্বর থাকবে। গত ২০২০ সালের ধারাবাহিকতায় এবারও লিটল ম্যাগাজিন চত্বর থাকবে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে। এবার যেসব লিটল ম্যগাজিন বইমেলায় স্টল নিতে যারা আগ্রহী তাদের আগামী রোববার ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চের মধ্যে আবেদন করতে হবে। আবেদন করার জন্য যে কোনো লিটলম্যাগের ন্যূনতম তিনটি প্রকাশিত সংখ্যা থাকতে হবে। আর, আবেদনপত্র বাছাইয়ের পরেই লটারির মাধ্যমে স্টল বরাদ্ধ দেয়া হবে।
প্রতিষ্ঠানবিরোধী লিটল ম্যাগাজিন ‘করাতকল’ এর নির্বাহী সম্পাদক কবি শাফি সমুদ্র বলেন, বাংলা সাহিত্যের বিকল্প ধারা ও বিরোধিতার স্পর্ধা নিয়ে লিটলম্যাগের চরিত্র তৈরি হয়। অমর একুশে গ্রন্থমেলার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর এ ধারার লেখকদের প্রাণের জায়গা। মেলার প্রথম দিকে তো লিটলম্যাগের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। কিন্তু এখন বইমেলায় লিটলম্যাগ আলাদা নয়, মেলার সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে। যদিও এবার বইমেলা করোনার পরিস্থিতির কারণে ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে মার্চে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবং প্রতিবছরের মতো এবার মেলায় লিটল ম্যাগাজিনের আলাদা চত্বর থাকছে। এটা আমরা যারা ছোটকাগজের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের জন্য আনন্দের। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে তরুণরা চিন্তার চর্চায় আরও উৎসাহিত হবে।
প্রসঙ্গত, লিটল ম্যাগাজিনকে বলা হয় লেখক সৃষ্টির আঁতুড়ঘর। অনেক ক্ষেত্রেই নিরীক্ষাধর্মী ও ব্যবসায়িক স্বার্থহীন এই কাগজে লিখেই নবীন লেখকদের অধিকাংশ হাত পাকান। সমাজের প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে সৃজনশীল নতুন ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করে লিটলম্যাগ। ফলশ্রুতিতে বুদ্ধিভিত্তিক বিকাশের সঙ্গে লিটলম্যাগ ধারাটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। উনবিংশ শতাব্দী থেকে আজ অবধি পর্যন্ত বাংলা ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও বুদ্ধিভিত্তিক চিন্তাধারাকে নানাভাবে বিকশিত করে এসেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে লিটলম্যাগ চর্চায় উঠে এসেছে প্রথাবিরোধী ভাবনা, নতুনদের চিন্তা-ভাবনার বিকাশের একটি মাধ্যম। দীর্ঘ আন্দোলনের পথ ধরে বাংলা সাহিত্যে লিটলম্যাগ এখন তার অবস্থান পোক্ত করেছে। আর, ২০০৬ সাল থেকে বইমেলায় বাংলা একাডেমির সংশ্লিষ্টতায় সংযোজিত হয় লিটলম্যাগ কর্নার।
সময়ের পরিক্রমায় একুশের গ্রন্থমেলায় বহেড়া তলায় ভরে ওঠে লিটলম্যাগ স্টল; জমে ওঠে লিটলম্যাগের লেখক, পাঠক ও পক্ষপাতিত্বদের কলরবে। ক্রমে বহেড়া তলায় যেমন লিটলম্যাগ স্টল সংখ্যা বাড়তে থাকে, তেমন পাঠকের সংখ্যা ও আন্দোলনকারীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। পাঠকের কাছে বার্তা পৌঁছে যেতে থাকে লিটলম্যাগের। নতুন প্রজন্ম জানতে থাকে লিটলম্যাগের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ্য। এরই ফলশ্রুতিতে আয়তনে বইমেলার পরিসর বিস্তৃতি লাভ করলে ২০২০ সাল থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থানান্তরিত হয় লিটলম্যাগ চত্বর।
সান নিউজ/আরআই