সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক: সমাজের নানান অপকর্ম, অন্যায়-অবিচার, ধর্মন্ধাতা ও মৌলবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের এক বলিষ্ঠ উদাহরণ শিল্পের নিভৃতচারী মানুষ শিল্পী অধ্যাপক নিসার হোসেন।
শিল্পের সঙ্গে সখ্যতা করেই অতিবাহিত হচ্ছে তার সমগ্র জীবনকাল। ২০ ফেব্রুয়ারি পূর্ণ হচ্ছে এই শিল্পীর জীবনের ষাট বছর। আর এ জন্মবাার্ষিকী উপলক্ষে শিল্পী নিসার হোসেনকে দাঁড়াতে হলো দেশের শিল্পী ও শিল্পপ্রেমীদের এক অন্যরকম কাঠগড়ায়। এজলাস- রাজধানীর ধানমিন্ডর গ্যালারি চিত্রক। যে কাঠগড়ায় ‘ষাট বছরের খতিয়ান’ শিরোনামে শিল্পীর সঙ্গে থাকছে শিল্পীর বিভিন্ন সময়ে আঁকা শতাধিক শিল্পকর্ম।
শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ) থেকে শুরু হলো শিল্পী ও শিল্পকর্মের সম্ভারের বিচারকী ঢংয়ের এই কাঠগড়া। এ উপলক্ষে এদিন বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী আয়োজন। এই আয়োজনে এ শিল্পী ও শিল্পকর্মের বিচারকী কাঠগড়ার হাকিমী ভূমিকা পালক করে উদ্বোধন করেন সাংস্কৃতিকব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।
শিল্পী রফিকুন নবীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় বিশেষ অতিথি হিসেবে হাকিমের ভূমিকায় আরও ছিলেন সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, প্রকৌশলী মঈনুল আবেদীন ও শিল্পানুরাগি কাজী আনিসুল মুকিত। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্পী ও ভাস্কর হামিদুজ্জামান, ইকবাল, রসিদ আমিন, আর্কিটেক্ট শহিদ কবির পলাশ, অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, নিসারকে ছোট দেখেছি। সে এত বড় হল কবে? তিনি বলেন, নিসার হোসেনের চিন্তা, বড় হয়ে ওঠা, তার দর্শন, মানুষ ও দেশ নিয়ে তার যে ভাবনা, যে প্রগতিশীলতাকে সে ধারণ করে, যা কিছু সে নিজের ভেতরে লালন করে, সব সে পেয়েছে উত্তরাধিকারসূত্রে। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তার চিন্তা আরও সমৃদ্ধ ও বিস্তৃত হয়েছে, কিন্তু শেকড়টা ছিল বাবা এমদাদ হোসেন, বঙ্গবন্ধু, ৭ মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধে। নিসার হোসেনের সকল শিল্পকর্মের শেকড় কিন্তু এসব জায়গায় গাঁথা।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আরও বলেন, গ্যালারি চিত্রক আগের জায়গায় ফিরেছে এটা আমাদের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। নিসারের পিতা এমদাদ হোসেন আমাদের সংস্কৃতি ও রাজনীতির গুরু ছিলেন। হাতে লেখা পোস্টার করা হতো। ভাত মুড়ি ঘুম। তার মাও ছিলেন ধরিত্রীর মতো মাতৃরপী। আমাদের সহ্য করতেন। মাতবর সাব তোমাদের কামে গেসে। ওই পরিবছশে নিসার বড় হয়েছে। নিজের মধ্েয এসব লাল ন করেছে। তার চিন্তা বিস্তৃত হয়েছে।
রনবী বলেন, এক একজন এমদাদ কে দেখি। নিষ্ঠার সঙ্গে বড় বড় কজ করতে দেখতাম তাকে। প্রদর্শনী কম করার ক্ষেত্রে তাকে তুলনা করি বড় শিল্পীদের সঙ্গে। আবেদীন, সফিউদ্দিন, কিবিয়া স্যারকে এককে রাজি করানো যেত না। আদি থেকে সব ধরণের কাজ এখানে আছে। ছবিগুলোতে নিসারকে খুজে পাওয়া যায়।
আনিস মুকিত বলেন, গ্যালারি অক্সিজেন সেন্টার। যারা অ্যাংজাইটি নিয়ে থাকি, তাদের জন্য রিলিফ। এ রকম আরও গ্যালারিতে যদি সরকারের সাপোর্ট পায় আরও ভালো কাজ করতে পারবে। তিনি বলেন, শিল্পীরা শূন্য ক্যানভাসে নতুন কিছু সৃজন করে। একে মূল্য দিতে হবে। সোসাইটির কত টাকা আছে, তা থেকে কিছু দিলেই তো কোন ব্যাপার না। তাহলে দেশের শিল্পীদের কাজের গতি বাড়বে। আর তা হলে সাংস্কৃতিক ভাবে আমরা আরও এগিয়ে যাবো। সাংস্কৃতিক ভাবে এগিয়ে যাওয়াই তো দেশের এগিয়ে যাওয়া।
শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম শিল্পী নিসার হোসেনকে পেয়েছি। নিসার হোসেন অনেক প্রতিকূলতার মধ্যেও কাজ করেন। প্রতিকূলতার মধ্যেও যারা কাজ করেন তারা শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। তিনি বলেন, সংস্কৃতি সরে গেলে মাদক-জঙ্গিবাদ জায়গা করে নেবে।
শিল্পী নিসার হোসেন বলেন, এটাই প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনী ও উদ্বোধন। মৌলবাদী উত্থানের সময় সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে ২০০২ এ গ্যালারি টুয়েন্টি ওয়ানে প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম। সেটা চিত্রকে করার কথা ছিল। যাই হোকে, এবারের এ প্রদর্শনীতে আমার বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ৪৪ বছরের কাজ আছে। এসব ছবিগুলো আমি দেয়ালের শোভা বাড়াতে ছবি আঁকিনি। সাম্প্রতিক সময়ের নিউজ ও ঘটনা পড়ে যে প্রতিক্রিয়া হয় সেটাই আকি। এ জন্য এই ছবিগুলো আমার কাছে ছিল। আর কিছু কাজ ক’জন ঘনিষ্ঠ লোক নিয়েছিল। তাদের থেকে এনেছি। এ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে এই সবগুলো একত্র করার মাধ্যমে নিজের কাজ দেখা এবং তাতে আমি কি এঁকেছি তা নতুন করে উপলব্ধী করা। আমার কাজ নিয়ে যারা লিখেছেন সেসব নিয়ে বই হবে প্রদর্শনী পর।
আয়োজনের একপর্যায়ে শিল্পী নিসার হোসেনের কেক কাটা হয়। ৬০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে কেক কাটা হয়। এবং হাকিমগণ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ে-যাবজ্জীবন দন্ড দেন তারা। এবং তারা দাবি জানান, নিসার হোসেন চারুকলার সাকসেসফুল ডিন, তাকে ডিন করে রাখা হোক। আর এই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ছবির আঁকার কাজ থামানো যাবে না।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিল্পী ও শিল্পানুরাগীদের জন্য প্রদর্শনীর গ্যালারি উন্মুক্ত থাকবে।
সান নিউজ/আরআই