সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক: বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কথাসাহিত্যিক শওকত আলী। বিংশ শতাব্দীর শেষভাগে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে গল্প ও উপন্যাস লিখে খ্যাতি অর্জন করেন ব্যক্তিগত জীবনে এই সাংবাদিক ও শিক্ষক।
১৯৯০ সালে সাহিত্যে অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত এই লেখকের বিগত ১২ ফেব্রুয়ারি ছিলো জন্মবার্ষিকী। তার এই জন্মকবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সেমিনার ও আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রয়াত কথাশিল্পী শওকত আলীকে স্মরণ করেছে জাতীয় জাদুঘর।
‘শওকত আলীর কথা সাহিত্য : সামাজিক স্মৃতি, স্বর, রূপান্তর’ শিরোনামে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এই আয়োজন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস।
প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক।
জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী ও গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবু বকর সিদ্দিক।
কে এম খালিদ বলেন, বাংলা কথাসাহিত্যের তিনটি আকর উপন্যাস- ‘উত্তরের খেপ’, ‘দক্ষিণায়নের দিন’ এবং ‘প্রদোষে প্রাকৃতজন’- এর মাধ্যমে বাংলা কথা সাহিত্যে শওকত আলী স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। পেশায় তিনি শিক্ষক হলেও নেশায় ছিলেন একজন প্রকৃত মানবতাবাদী ও সমাজ অনুসন্ধানী লেখক। সমাজের অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষের কথা তুলে এনেছেন নিজের রচনায়।
প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বাংলা কথাসাহিত্যের মানব অভিজ্ঞতালোকে শওকত আলী একটি নক্ষত্রবিন্দু। তার এই নাক্ষত্রিক অবস্থান যেমন ব্যাপ্ত তেমনি দীপ্তিময়। তার কথাসাহিত্যে আমরা নানা আয়তনে, কাঠামো এবং অবয়বে কল্পনার যে বিন্যাস লক্ষ্য করি তা তার স্মৃতি-সিমুলেশনের শব্দরূপ। প্রথম গল্প থেকে শুরু করে শেষ উপন্যাসটিতে এইসব স্মৃতির জীবনায়ণ চিহ্নিত করা সম্ভব।
আলোচকরা বলেন, কথাসাহিত্যে শওকত আলী আধুনিক ও উচ্চাধুনিক দৃষ্টিকোণ থেকে লিখতেন। কথাসাহিত্যে একটি দেশের সামাজিক অগ্রগতিসহ সামগ্রিক উন্নয়ন, মানুষের সুখ দুঃখের চিত্র তুলে ধরা হয়। একজন সার্থক সচেতন কথাসাহিত্যিক হিসেবে তিনি ছিলেন অনন্য। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৬৯’এর গণঅভ্যুত্থান এবং মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাঙালির উথান-পতনকে লেখনীতে অত্যন্ত নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শওকত আলী ছিলেন একজন দার্শনিক। তার চিন্তা-ভাবনায় ও প্রকাশের ভাষা ছিল মৌলিক। এজন্যই তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র। তিনি সমাজের শোষিত ও নিম্ন বর্গের মানুষের জীবনকে বিশ্লেষণ করেছেন।
সান নিউজ/আরআই