সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক : বর্তমান বিশ্বের অন্যতম এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নন, বিচক্ষণতা ও সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার অন্যতম এক অভিজ্ঞতা সম্পন্নও রাজনীতিবিদ হলেন শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জেষ্ঠ্য এই কন্যার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে নানা ঘাত-প্রতিঘাত, চড়াই-উৎরাই, কন্টকার্ণী পথ পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন।
তার এমন জীবনের নানান অভিব্যক্তি এবং চালচলনের মাধ্যমে কীভাবে বিভিন্ন বাধা ও চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠেছেন; তা নিয়ে দেশের ২১জন বরেণ্য শিল্পী আঁকা ২১ চিত্রকর্ম নিয়ে বিগত বছরের ১২ ডিসেম্বর শুরু হয়েছিলো একটি বিশেষ প্রদর্শনী। রাজধানীর গ্যালারি কসমসে অনুষ্ঠিত দুই মাসব্যাপী সেই প্রদর্শনীটি মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শেষ হলো।
কসমস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় গ্যালারি কসমস ও কসমস আতেলিয়ার ৭১-এর যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক আর্ট ক্যাম্প থেকে চিত্রকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীটি অনুষ্ঠিত হয়। ক্যানভাসে এ্যাক্রেলিক রঙে শিল্পীরা তাদের তুলির আঁচড়ে শেখ হাসিনার নানা সময়ের অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা এই প্রদর্শনীর শিরোনাম ছিলো ‘শেখ হাসিনা : অন দ্য রাইট সাইড অব হিস্ট্রি’।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ছিল সমাপনী আয়োজন। এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক কূটনীতিক তারিক এ করিম, নাজমা করিম, ওয়াইল্ডটিয়ামের সিইও মো. আনোয়ারুল ইসলাম, কসমস গ্রুপের মানব সম্পদ বিভাগের প্রধান কেট জারো খান এবং গ্যালারি কসমসের নির্বাহী আর্টিস্টিক ব্যবস্থাপক সৌরভ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা এবং বিভিন্ন সময়ে তার উপর হামলাসহ অনেক বাধা ও চ্যালেঞ্জের মুখে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এ প্রদর্শনীর শিল্পকর্মগুলোতে শিল্পীরা সুনিপুণভাবে শেখ হাসিনার অভিব্যক্তি এবং কঠিন সময়ের বিভিন্ন ভঙ্গিমা এবং চালচলন তুলে ধরেছেন।
শেখ হাসিনা একজন কর্মতৎপর ও অমায়িক মানুষ হিসেবে উল্লেখ করে আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী মানুষের সাথে এমনভাবে কথা বলেন যে প্রধানমন্ত্রী নন তিনি তাদের আত্মীয়। তবে, যখন রাষ্ট্রের কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে তিনি তার বুদ্ধিমত্তা, দৃঢ় মনোভাব এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সব বাধা ডিঙ্গিয়ে গেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার সক্ষম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব, অপরিসীম সাহসিকতা ও দৃঢ় মনোবলের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে থাকা সব প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। তার ব্যক্তিগত এসব গুণাবলি শিল্প প্রদর্শনীতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলা এবং জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকারও প্রশংসা করে ঢাবির সাবেক ভিসি বলেন, অনেক উন্নত দেশ এখনও তাদের নাগরিকদের জন্য একটি টিকাদান নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে, শুধুমাত্র শেখ হাসিনার অসামান্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের মানুষ এখন দেশে টিকা পাচ্ছেন।
শিল্পকর্মগুলোতে শেখ হাসিনার ভাব ও অভিব্যক্তি সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য শিল্পীদের অভিনন্দন জানিয়ে সাবেক কূটনীতিক তারিক এ করিম বলেন, আমি এমনও ছবি দেখতে পেয়েছি যেখানে শিল্পীরা খুব সুন্দরভাবে তাকে (হাসিনার) আশ্চর্যন্বিত ও চোখের ভাব এবং চিন্তাভাবনাগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।
তিনি আরও বলেন, আমি অবাক হয়ে দেখি কীভাবে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে ট্র্যাজেডির পর নিজে কীভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি নিজেকে দক্ষ এবং তার পিতার দর্শন বাস্তবায়ন করেছেন। শিল্পীরা এখানে যথাযথভাবে তার এই গুণাবলি এবং ভাবগুলো তুলে ধরেছেন।
কেট জারো খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। জাতির পিতার কন্যাকে নিয়ে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করতে পেরে কসমস গর্বিত। প্রধানমন্ত্রী শুধু আমাদের ভবিষ্যতই দেখিয়েছেন তা নয়, সেই সাথে প্রতিটি যুবতী, ছেলে, পুরুষ এবং নারীদের তাদের জীবনের শেষ দিন অবধি কীভাবে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হয় তার অনুপ্রেরণাও দিয়ে যাচ্ছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের বছরব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনুষ্ঠিত এই প্রদর্শনীর শিল্পীরা হলেন- অলকেশ ঘোষ, আহমেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, নাসির আলী মামুন, বিশ্বজিৎ গোস্বামী, রত্নেশ্বর শুত্রধর, রাসেল কান্তি, মনজুর রশিদ, সৌরভ চৌধুরী, মানিক বনিক, জয়ন্ত সরকার, আজমল হোসেন, ফিদা হোসেন, অমিত নন্দী, দিদারুল লিমন, তামান্না আফরোজ, ফাহিম চৌধুরী, মিসকাতুল আবির, প্রসূন হালদার, হাসুরা আক্তার রুমকি ও সুরভী আক্তার অংশ নেন।
সান নিউজ/আরআই