হাসনাত শাহীন: এবছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে কি হবে না এমন জল্পনা-কল্পনা শেষে ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির মেলা গড়ালো মুক্তিচেতনার মাস মার্চে। আপামর মানুষের প্রাণের এই বইমেলা ১৮ মার্চ থেকে শুরু হয়ে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। তা নিয়ে মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমিতে যেমন শুরু হয়েছে নানান কর্মযজ্ঞ, তেমনই এ মেলার প্রাণ বইয়ের ছাপাখানাগুলোতেও শুরু হয়ে গেছে বই ছাপানোর কাজ। রাত-দিন ঘুরছে ছাপাখানার চাকা। সঙ্গে সাদা কাগজগুলো জীবন্ত হয়ে উঠছে বর্ণমালায় বর্ণমালায়। এ চিত্র এখন রাজধানীর প্রায় সব ছাপাখানায়। কাজ চলছে বই বাঁধাইখানাগুলোতেও।
গত কয়েকদিনে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলের ছোট-বড় ছাপাখানা বা মুদ্রণ ও বই বাঁধাইখানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে নতুন বইয়ের ছাপার কাজেই এখন পুরোদমে মনোনিবেশ করেছেন এসব শিল্পের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকেরা। তবে বিগতবছরগুলোর তুলনায় ছাপাখানাগুলোর এবারের ব্যস্ততা অনেকাংশেই কম। বই মুদ্রণ ও বাঁধাইয়ের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন- করোনাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অনেক প্রকাশক এবারের মেলায় বড় ধরণের বিনিয়োগ করছেন না বলে ছাপাখানার শ্রমিকদের ব্যস্ততা অন্যান্যবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিবার যেখানে বইমেলা উপলক্ষে নভেম্বর থেকেই আমাদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। এবার সেটা এখনও হয়নি। বলা যায়, ছাপাখানা ও বাঁধাইখানার চাকা ঘুরলেও ব্যস্ততা কম। তবে সময় যত এগিয়ে আসবে, আমাদের ব্যস্ততা তত বাড়বে।
একই সঙ্গে তারা- এবারের মেলা প্রকাশনা ও বিক্রি দুই দিক থেকেই পিছিয়ে থাকবে বলেও আশঙ্কা করছেন। সেই রকমই গত বছর মেলায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার বইয়ের প্রকাশ এবং ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হলেও এবার সে সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন সুধীজনরা।
রাজধানীর ফকিরাপুল, কাঁটাবন, সূত্রাপুর ও বাংলা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকার ছাপাখানাগুলো পরিদর্শনে এর সত্যতাও পাওয়া গেছে। ছাপাখানার ব্যস্ততার বিষয়ে জানতে চাইলে ফকিরাপুলের ছাপচিত্র প্রিন্টিং প্রেসের আশিকুল সান নিউজকে বলেন, এতদিন অফিসিয়াল সামগ্রী ক্যালেন্ডার, প্যাড ইত্যাদির কাজ করেই সময় পার করেছি, এখন বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। তবে অন্যান্য বছর কাজের যেই পরিমাণ চাপ ছিল এবার সেই পরিমাণ চাপ নেই। ধীরে ধীরে ব্যস্ততা বাড়লেও বিগত বছরগুলোর মত কাজ আসবে না বলেই ধারণা করছি।
একই এলাকার আসলাম প্রিন্টিং প্রেসের মালিক আসলাম বলেন, ফেব্রুয়ারির মেলা মার্চে শুরু হচ্ছে বলে আমাদের এখানে কাজের চাপ খুবই কম। যে জানুয়ারিতে আমরা দম ফেলার ফুরসত পেতাম না, এবার সেই জানুয়ারিতে প্রায় অলস সময় কাটিয়েছি।
কাঁটাবনের শহীদ প্রিন্টার্সের তারিকুল ইসলাম বলেন, এবার বইমেলা হবে কি হবে না এ নিয়ে আমরা সন্দিহান ছিলাম। কিন্তু ফেব্রুয়ারির বইমেলা হচ্ছে মার্চে। আমরা ভাবছিলাম তারিখ নির্ধারণের পর কাজ বাড়বে, কাজ শুরু হয়েছে ঠিকই কিন্তু কাজের চাপ বাড়ছে না। মনে হচ্ছে অন্যান্যবারের তুলনায় এবার বই কম ছাপা হবে। তবে, আশা করছি- মেলা যত সামনে আসবে আমাদের ব্যস্ততা ততই বাড়বে।
সূত্রাপুরের পাণিনি প্রিন্টিং প্রেসের ফারুখ আহমেদ বলেন, মেলা এখনও শুরু হয়নি। তারপরে, এবার স্কুল-কলেজ-ভার্সিটি বন্ধ। একারণে আমাদের ছাপানোর কাজ একেবারেই নেই। আগে যেখানে দিন-রাত কাজ করতাম, এখন সেখানে বিকেল ৫টার মধ্যে ছাপাখানা বন্ধ করতে হচ্ছে। তবে এখন বইমেলার জন্য কিছু কিছু কাজ আসছে। অথচ, গতবছরের এই সময়েও আমরা দমফেলার ফুসরত পাইনা।
এদিকে, বিজ্ঞানের বদৌলতে গুগলে সার্চ দিয়ে সব ধরনের বই ও তথ্য পাওয়ার কারণে এবং ই-পেপার বের হওয়ায় মুদ্রিত বইয়ের চাহিদা কমে গেছে। যার কারণে সৃজনশীল প্রকাশনা শিল্পে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন একাধিক প্রকাশক। যার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে ছাপাখানাগুলোতে।
সান নিউজ/এইচএস/এসএস