সাংস্কৃতিক প্রতিবেদক : আবহমান বাংলার চিরায়ত এক ঐতিহ্য-যাত্রাপালা। এদেশের শেকড়ের সাথে মিশে আছে যাত্রা। সুরেলা সংলাপ ও বিবেকের গানের সেই চিরচেনা সুরে দর্শকদের বিমোহিত হওয়ার সেই দৃশ্য বর্তমানে বিরল।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আকাশ সংস্কৃতির অবাধ প্রবাহের কারণে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। যাত্রাদলগুলোকে নিবন্ধনের মাধ্যমে হারিয়ে যাওয়া যাত্রাকে পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে প্রতিবছর নিয়মিত যাত্রা উৎসবের আয়োজন করে আসছে শিল্পকলা একাডেমি। এরই ধারাবাহিকতায় শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হলো ‘১২তম যাত্রা উৎসব ২০২১’। একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে শুরু হয় ‘যাত্রা শিল্পের নবযাত্রা’ শীর্ষক চারদিনের যাত্রা উৎসব।
উদ্বোধনী দিনে ‘বেহুলা-লক্ষিন্দর’-এর কাহিনীকে কেন্দ্র করে দেশের ৬টি যাত্রাদল তাদের নিয়মিত প্রযোজনার ৬টি যাত্রাপালা পরিবেশন করে।
এদিন ময়মনসিংহের দি নিউ আলেয়া অপেরা পরিবেশন করে ‘বেহুলা’; এই যাত্রাপালাটির পালাকার-জেরিন আক্তার এবং পরিচালনা করেছেন-ফজলুল হক। দ্বিতীয় পরিবেশনায় ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’ নিয়ে মঞ্চে আসে ময়মনসিংহের ঈশিতা অপেরা। এই যাত্রাপালাটির পালাকার-রাকিবুল ইসলাম এবং পরিচালনায় ছিলেন-জাফর আলী।
এরপর জামালপুরের হীরামন অপেরা পরিবেশন করে ‘নিজাম খুনি’। এটির পালাকার-জসিম উদ্দিন এবং পরিচালনায় ছিলেন-এম আলী আকবর।
পর্যায়ক্রমিক পরিবেশনায় ময়মনসিংহের দল দি নিউ রূপা অপেরা পরিবেশন করে ‘বেহুলা সুন্দরী’। এর পালাকার- দুরন্তপাধ্যায় এবং নিদের্শনায় ছিলেন-নিজাম উদ্দীন। টাঙ্গাইল জেলার বেহুলা লক্ষিন্দর অপেরা পরিবেশন করে ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’; এটির পালাকার-রফিকুল ইসলাম এবং পরিচালনায় ছিলেন-আব্দুর রহিম। দিনের সবশেষ পরিবেশনা নিয়ে মঞ্ েআসে টাঙ্গাইলের ভাসান যাত্রা অপেরা। তারা পরিবেশন করে ‘বেহুলা লক্ষিন্দর’। এটির পালাকার-রফিকুল ইসলাম এবং পরিচালনায় ছিলেন-চান মিয়া।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) এ উৎসবে পিরোজপুরের মহাশক্তি নাট্য সংস্থা পরিবেশন করবে যাত্রাপালা ‘অনুসন্ধান’, মাতা মঞ্জুলী কাদেরী দেবী নাট্যসংস্থা ‘সীতার বনবাস’, বরিশালের আনন্দময়ী নাট্য সংঘ ‘পতিতপাবন গুরুজী’, শিবশক্তি নাট্য সংস্থা ‘মহারাজা হরিশ্চন্দ্র’, দক্ষিণবঙ্গ নাট্যসংস্থা ‘বিমাতার চক্রান্ত’ এবং খুলনার শ্রী গুরুনাট্য সম্প্রদায় ‘ঢাকা জ্বলছে’।
৩১ জানুয়ারি দেখা যাবে-বগুড়ার করতোয়া যাত্রা ইউনিটের যাত্রাপালা ‘জেল থেকে বলছি’, ঠাকুরগাঁওয়ের দেশ বাংলা অপেরা ‘কাশেম মালা, বরগুনার পায়রা যাত্রা ইউনিটের ‘গুনাই বিবি’, পঞ্চগড়ের দি লায়ন অপেরার ‘দেবী সুলতানা’ এবং টাঙ্গাইলের মৌ অপেরার ‘লাইলী-মজনু’।
উৎসবের শেষ দিন ১ ফেব্রুয়ারি পরিবেশিত হবে-বগুড়ার সোনালি নাট্য সংস্থার ‘মিলন মালা’, টাঙ্গাইলের মধুমতি অপেরার ‘লাইলী-মজনু’, খুলনার বনানী অপেরার ‘নিহত গোলাপ’, নরসিংদীর শিবপুর যাত্রা ইউনিটের ‘আলোমতি-প্রেমকুমার’ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পাপি অপেরার ‘আপন দুলাল’ যাত্রাপালা।
প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে রাত ১০টা পযন্ত একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে পরিবেশিত হবে যাত্রাপালা। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে সাধারণ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এ আয়োজন।
যাত্রাশিল্প উন্নয়ন কমিটির ৩জন সদস্য প্রতিদিনের যাত্রাপালায় উপস্থিত থেকে পরিবেশিত যাত্রাপালাগুলোর মূল্যায়ন করবেন। তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিতেই যাত্রাদলগুলোকে নিবন্ধন প্রদান করা হবে। যাত্রাশিল্প উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা হলেন-এস এম মহসীন, মিলন কান্তি দে। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ১জন করে প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন।
প্রসঙ্গত, শিল্পকলা একাডেমি ইতোমধ্যে ১১টি পর্যায়ে ১১৭ (একশত সতের) টি যাত্রাদলকে নিবন্ধন প্রদান করেছে এবং ১৫টি যাত্রাদলকে বিভিন্ন অভিযোগে নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।
সান নিউজ/আরআই