নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাস্তা-ঘাটে নেই লোক সমাগম, গণপরিবহন বন্ধ, রিকশা, অটোরিকশাও একেবারেই কম, কিছুক্ষণ পর পর দেখা মিলছে দুই-একটি প্রাইভেট কার, বাজারগুলো ক্রেতা শূন্য, অধিকাংশ দোকান-পাট বন্ধ। ব্যস্ত নগরী ঢাকা এক ঘুমন্ত পুরি। সাম্প্রতিককালে রাজধানী ঢাকার এমন চিত্র দেখেছে কেউ?
বিশ্বে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে জীবনের সব ছন্দ। ঘরে বন্দি সবাই। নিজের নিরাপত্তায় বাসায় থাকতে হচ্ছে দেশবাসীকে। এ কারণে ঢাকার সড়কগুলো একেবারেই ফাঁকা।
আজ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছ গণপরিবহণ। গণ-জমায়েতও নিষিদ্ধ। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হলে বাসায় বসে থাকতে হবে, এমনই মত বিশেষজ্ঞদের।
করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। অবশ্য রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়নি সেনাবাহিনীর টহল।
তবে খোলা রয়েছে কিছু কিছু নিত্য পণ্য, কাঁচাবাজার ও ওষুধে দোকান। সকালে রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার দেখা গেছে একেবারেই ক্রেতা শূন্য। পুরো বাজারে ক্রেতা দেখা গেল মাত্র দুই-তিনজন। বিক্রি নেমে এসেছে শূন্যের কোঠায়। তবে পণ্যের দাম প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০টাকা বেশি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে মাল আসেনি ঢাকায়। যারা আনছেন, পরিবহণ খরচ বাড়ছে বেশি। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে।
রাজধানীর সবচেয়ে বড় কাঁচাবাজারের আড়ত কারওয়ান বাজার। দিন-রাত সব সময় থাকে সরগরম। কিন্তু আজ সকালে দেখা গেল তার উল্টো চিত্র। নেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁক-ডাক। অধিকাংশ আড়তই বন্ধ। যারাই খুলেছেন অলস বসে আছেন।
শপিং মলগুলো বন্ধ হয়ে গেছে আগেই। গেট তালা দিয়ে বসে আছে নিরাপত্তা কর্মী।
যে দুই একটি রিকশা, অটোরিকশা দেখা যায় তারাও বসে আছে যাত্রীর অপেক্ষায়। কোন কোন রিকশা চালক নিজের রিকশায় বসেই ঘুমচ্ছেন।
রাস্তায় লোকসমাগম নেই, এমন পরিস্থিতিতে কেমন চলছে? এ প্রশ্ন করতেই রিকশা চালক জানান, সকাল ৭টায় রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যাত্রী পেয়েছে মাত্র দুই জন। ২০ টাকা করে ৪০টা তার কামাই হয়েছে। এই টাকা দিয়ে রিকশার জমা কিভাবে দেবেন, আর কিভাবেই বা চাল-ডাল কিনবেন? দিন চলবে কিভাবে সেই দুশ্চিন্তাতেই আছেন তিনি।
আরেক রিকশা চালককে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, সকালে বের হয়ে একজনও যাত্রী পাননি তিনি। রিকশাটি তার নিজের ফলে জমা নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই তার। তবে স্ত্রী, ছোট দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আজ কিভাবে কাটবে সেই চিন্তাই করছেন তিনি।
ধানমণ্ডি ২৭ নম্বরে এক পথচারীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন ওষুধ কিনতে বের হয়েছেন। একই সাথে নিত্য পণ্যও কিনবেন। বলেন, রাজধানীর এ অবস্থা এর আগে কখনো দেখেননি। একেবারেই ফাঁকা, জনমানব শূন্য। এমন দেখে একটু ভয় ভয় করছে বলেও জানান তিনি।
করোনা আতঙ্কে একেবারে ফাঁকা রাজধানীর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ সদস্যদের বসে থাকতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে এসময় এক পুলিশ সদস্য জানান, ফাঁকা সড়ক, তাই নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন স্থানে নিরাপত্তার নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।