এই প্রথমবারের মতো অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল স্বীকার করে নিলেন, দেশে ঋণ খেলাপি বেড়েছে। যদিও তিনি বরাবরই দাবি করে আসেছিলেন যে, ঋণ খেলাপির সংখ্যা একেবারেই বাড়েনি। এছাড়া দেশের অর্থনীতির অবস্থা এখন ভাল নয় বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের (বিডিবিএল) ‘ব্রাঞ্চ ম্যানেজারদের বার্ষিক কার্যক্রম প্রণয়ন সম্মেলন ২০২০’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং সেক্টরের অবস্থাও খুব ভালো না। ব্যাংকগুলো যদি ভালো চলতো, তবে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করতে হতো না। মিস মেসের কারণে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।’
রাজধানীর মতিঝিলে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কারণে সংসদে আমাকে গালি শুনতে হচ্ছে। আপনারা বলেন, এটা কি আমার জন্য হয়েছে। না আপনাদের জন্য? আমি আশা করবো, আমার জন্য নয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শতবার্ষিকী উপলক্ষে আপনারা সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করবেন। দেশটাকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবেন।’’
এসময় তিনি বলেন, ‘ দেশের অর্থনীতি এখন খারাপ অবস্থায় রয়েছে। তবে বছর শেষে এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বের কোনও দেশেই আমদানি-রফতানি সঠিকভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশের কিছু সেক্টরেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে বছর শেষে দেশে আমদানি- রফতানির অবস্থা ভালো হয়ে যাবে।’
উল্লেখ্য, সরকারের বর্তমান মেয়াদে নতুন দায়িত্ব নিয়েই গত ১০ জানুয়ারি ব্যাংকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন, ‘আজকের পর থেকে এক টাকাও খেলাপি ঋণ বাড়বে না।’
তারপর থেকে এমন বক্তব্য অর্থমন্ত্রী দিয়েছেন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের আশ্বস্ত করতে চাই, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না।’
তার হাতে গড়া প্রথম বাজেটের পাসের পর গত ২২ জুলাই আবারও তিনি সাংবাদিকদের দৃঢ় কণ্ঠে বলেন, ‘দায়িত্ব নিয়ে বলেছিলাম, খেলাপি ঋণ আর বাড়বে না। আপনারা লিখেছেন, বেড়েছে। কিন্তু হিসাব অনুযায়ী খেলাপি ঋণ বাড়েনি; বরং খেলাপি ঋণ কমেছে।’
গত ২৫ আগস্ট শেরেবাংলা নগরে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের আবারও বলেন, ‘খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক টাকাও বাড়েনি। যদি কেউ দাবি করেন যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়ছে, তাহলে আমি এটা মানব না।’
এরপর গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রমালিকানাধীন চার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর একই কথা প্রতিধ্বণিত হয় তাঁর কণ্ঠে। মুস্তফা কামাল আবারও বললেন, ‘যদি বিদ্যমান আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া যায়, তাহলে আইনি প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হবে। শুধু তা-ই নয়, প্রয়োজনে নতুন করে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আর এ কারণে বলছি, ভবিষ্যতে খেলাপি ঋণ আর হবে না।’